Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরাটি হয়ে গেল অপারেশন থিয়েটার

আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরাটি হয়ে গেল অপারেশন থিয়েটার

ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়া এক গর্ভবতী মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ডাক্তার ও নার্স সহ একদল লোক। আর সেই মহিলা ট্রেনেই অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। ট্রেনের ভেতরে রক্তক্ষরণে তার চার মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা-চিলাহাটি আন্তঃনগর চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। ওই মহিলার মৃত শিশুটিকে ট্রেনেই ডেলিভারি করেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ট্রেনের কামরা হয়ে গেল অপারেশন থিয়েটার।

ওই ট্রেনের দায়িত্বে থাকা পার্বতীপুর সদর দফতরের টিটিই আমিরুল হক জাহেদী জানান, ট্রেনটি ঢাকা থেকে চিলাহাটি যাচ্ছিল। বরাবরের মতো ট্রেনের পেছনের বগি থেকে টিকিট চেকিং শুরু করলাম। সঙ্গে ছিলেন আরেক টিটিই বেলাল হোসেন। রাত ৮টার দিকে ট্রেনটি গাজীপুরের মহেড়া স্টেশন অতিক্রম করছিল। টিকিট চেক করতে ট্রেনের জে নম্বর কোচে যাওয়ার পর হঠাৎ শাহিন আলম নামে এক যাত্রী জানান, ডি নম্বর কোচের এক গর্ভবতী মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তখনই আমি আমার পিছনের গার্ড সিফাত হোসেনকে বললাম, দ্রুত ট্রেনের মাইকে পিএ অপারেটরকে ঘোষণা করতে যে, ‘ট্রেনে যদি একজন ডাক্তার থাকে, তাকে জরুরিভাবে ডি কোচে দরকার, একজন গর্ভবতী মহিলা গুরুতর অসুস্থ।’ মাইকিং করার পর একজন চিকিৎসক (ঢাকার ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সানাউল্লাহ দ্রুত কোচ থেকে এগিয়ে যান। এরপর একজন ৫ম বর্ষের ছাত্রী মহিলা চিকিৎসক (ড. আফসানা ইসলাম রোজা, রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালের ৫ম বর্ষের ছাত্রী)ও। এফ কোচ থেকে এসেছে। মাইক শুনে দুজন নার্স দ্রুত কোচের কাছে ছুটে গেল।
অসুস্থ নারীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় গর্ভে মারা যায় চার মাসের নবজাতক। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছিলেন নারী চিকিৎসক, নার্সরা। ডি কোচের মহিলা যাত্রীরা পোশাকে পুরো জায়গাটি ঘিরে ফেলেন। তিন আসনবিশিষ্ট চেয়ারের সারি মুহূর্তে পরিণত হয় অপারেশন থিয়েটারে।

এদিকে মহিলার স্বামী কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। এক যাত্রী জানান, তার পকেটে মাত্র ১২০০ টাকা ছিল। সঙ্গে সঙ্গে সব যাত্রী টাকা আদায় শুরু করেন। প্রায় পাঁচ হাজার টাকা রোগীর স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ডা: সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমার বাড়ি দিনাজপুরে। গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। ট্রেনে মাইক্রোফোনে ঘোষণা শুনে ডাক্তার হয়ে বসে থাকতে পারিনি। তবে ট্রেনে কাজ করা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাল-তলোয়ার কিছুই ছিল না, চ্যালেঞ্জ ছিল তাই। সবার সহযোগিতায় ওই নারী সন্তান প্রসব করতে সক্ষম হন এবং তিনি বেঁচে যান। বড় কোনো বিপদ হয়নি। আমরা প্রাথমিকভাবে টাঙ্গাইল স্টেশনে একটি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম সে স্বাভাবিক। এটা একটা সিনেমার গল্পের মতো। আমি আমার জীবনের এক অনন্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছি।

About Rasel Khalifa

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *