সম্প্রতি ঢাকার মুখ বসিহরক হাকিমের আদালতের সামনে ঘটে যায় একটি বড় ঘটনা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে। আর এ ঘটনায় গ্রেফতার করা ১০ আসামিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা দিচ্ছে বেশ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। জানা গেছে তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হলেও আসামিসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
১০ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ প্রতিবেদন দাখিলের পর তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করলে তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালে আসামিসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। তাদের দেওয়া। এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পলাতক আসামিসহ অপহৃত আসামিদের অবস্থান নির্ধারণ, নাম-ঠিকানা সংগ্রহ, গ্রেপ্তার ও তাদের প্রতিষ্ঠানের অফিসের ঠিকানা দিতে হবে। , দলের নেতাদের পদমর্যাদা এবং পদবী, সদস্য সংখ্যা, ঘটনার কমান্ডার, তাদের সংগঠনের ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ। এসব আসামির অস্তিত্ব আছে কি না সে বিষয়ে তথ্য প্রকাশের জন্য তাদের আবার ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।
আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারা হলেন শাহীন আলম ওরফে কামাল, শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন, বিএম মজিবুর রহমান, সুমন হোসেন পাটোয়ারী, আরাফাত রহমান, খায়রুল ইসলাম ওরফে সিফাত, মোজাম্মেল হোসেন, শেখ আবদুল্লাহ, আ. সবুর, রশিদুন্নবী ভূঁইয়া।
এর আগে ২০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কোতোয়ালি থানায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। অভিযুক্ত আরাফাত ও সবুরকেও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরাফাত ও সবুরকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আদালত পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ২০ জনের নামে মামলা করেন। মামলায় আরও সাত-আটজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর হোসেনের পরিকল্পনা ও নির্দেশে আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪)। জিয়া (অবসরপ্রাপ্ত মেজর)। তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মোঃ ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিদের অপহরণের পরিকল্পনা করে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জন সদস্য দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাত ১০-১২ জন সদস্য আদালতের আশপাশে অবস্থান নেয় এবং আদালতের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর অভিযুক্তকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তারা।
মামলার জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, রোববার (২০ নভেম্বর) সকাল ৮টা ৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে ১২ আসামিকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে আসামিদের ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগে হাজির করার জন্য সিজেএম আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল ৮ এ নিয়ে যাওয়া হয়।
এ মামলার শুনানি শেষে ১৩ নম্বর আসামি জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। ঈদে আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হন। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে আদালতের প্রধান ফটকে পৌঁছার আগেই আদালতের আশপাশে অবস্থানরত আনসার আল ইসলামের পাঁচ-ছয়জন অজ্ঞাতপরিচয় সদস্য এবং আরও ১০-১২ জন দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে হামলা চালায়। তারা কনস্টেবল আজাদের হেফাজতে থাকা আসামি মাইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সমীর ওরফে ইমরান (২৪), মো. আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪), মো. আরাফাত রহমান (২৪) ও মো. এ. সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজন (২১) তাদের হত্যার জন্য কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।
প্রসঙ্গত, আদালত থেকে কর্তব্বরত পুলিশের কাছ থেকে কিভাবে আসামি চিন্তায় করে নেয়া যায় তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠাচ্ছে সবাই। এ দিকে সে সময়ের ঘটনায় জানা যায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে আসামিদের মধ্যে কোনো একজন তার হাতে থাকা লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে কনস্টেবল আজাদের মুখে আঘাত করে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।