Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / National / ‘আদালতে লড়ে স্ত্রীসহ সন্তানদের আমেরিকা নিয়ে যেতে চাই’

‘আদালতে লড়ে স্ত্রীসহ সন্তানদের আমেরিকা নিয়ে যেতে চাই’

গ্যারিসন লুটেল নামের একজন আমেরিকান নাগরিক বলেছেন, বাংলাদেশের আদালতে আইনি লড়াইয়ের পর তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের আমেরিকায় নিয়ে যেতে চান।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের আদেশের পর গ্যারিসন লুটেল এ কথা বলেন।

দুই সন্তানের হেফাজতে নিয়ে মার্কিন বাবা গ্যারিসন লুটেল ও বাংলাদেশি মা ফারহানা করিমের মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ঢাকার পারিবারিক আদালতকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সময়ে, আমেরিকান বাবা গ্যারিসন লুটেল সপ্তাহে দুই দিন তার দুই সন্তানের সাথে দেখা করতে পারবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে। অভিভাবকদের একটি সুবিধাজনক স্থানে দেখার সময় নির্ধারণ করতে বলা হয়।

সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে গ্যারিসনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফওজিয়া করিম ও ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম। ফারহানা করিমের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এর আগে, গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেয় যে আমেরিকান পিতা গ্যারিসন লুটেল সপ্তাহে ২ দিন তার সন্তানদের দেখতে পারবেন। শিশুটির মা ফারহানা করিম শিশুটিকে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ঢাকার উত্তরা ক্লাবে নিয়ে আসবেন।

সেখানে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে শিশুটি। সেখানে বাবা গ্যারিসন লুটেল তার সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।

আদালতে শিশুটির বাবা গ্যারিসনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ। ফারহানা করিমের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সন্তানদের কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসেন গ্যারিসন। বাংলাদেশে আসার পর শিশুদের আদালতে আনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাংলাদেশি মা ফারহানা করিমকে দুই সন্তানসহ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। উত্তরা থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার সজিব মাহমুদ বলেন, মার্কিন নাগরিক ব্যবসায়ী গ্যারিসন লুটেল মো. তিনি 2018 সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারহানা করিমকে বিয়ে করেন। তাদের বাড়ি ঢাকার উত্তরা। ফারহানা স্থায়ীভাবে আমেরিকায় থাকেন। তিন বছর আগে তাদের প্রথম সন্তান হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ফারহানা ও গ্যারিসনের নিজস্ব বাড়ি ছিল। চলতি বছরের শুরুতে ফের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ফারহানা। ফারহানা করিম গর্ভবতী অবস্থায় জুন মাসে বাংলাদেশে চলে আসেন। গর্ভাবস্থায় তার বোন ও মায়ের সঙ্গে থাকা দরকার এই অজুহাতে সে বাংলাদেশে আসে। আসার পর তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বাচ্চাদের কথা ভেবে গ্যারিসন নিয়মিত ফারহানাকে টাকা দিচ্ছিল।

কিন্তু পরে দেখেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ করছেন না। কোন আপডেট দিচ্ছে না। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে অক্টোবরে বাংলাদেশে আসেন তিনি। বাংলাদেশে আসার পর গ্যারিসন যোগাযোগ করেন; কিন্তু ফারহানা দেখা করতে চায় না, বাচ্চাদের দেখাতেও চায় না।

একপর্যায়ে উত্তরা থানার পুলিশ ও গ্যারিসন যে হোটেলে ছিল তার সহায়তায় ফারহানার বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন ফারহানা করিম কানাডিয়ান এক ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করছেন। সে কানাডিয়ান পুরুষকে বিয়ে করেছে বলে দাবি করেছে। এদিকে মাসখানেক আগে আরেকটি ছেলের জন্ম দেন ফারহানা।

আইনজীবী বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল তিনি গ্যারিসন হাসপাতালের কাগজপত্র দেখিয়েছিলেন যে গ্যারিসনের দ্বিতীয় সন্তান নেই। এই শিশুটি তার কানাডিয়ান নাগরিক সঙ্গীর। তিনি একটি বিয়ের নথি দেখিয়ে বলেছিলেন যে তিনি একজন কানাডিয়ান নাগরিককে বিয়ে করেছেন; কিন্তু আমেরিকান নাগরিক গ্যারিসনকে এখনো ডিভোর্স দেননি। গ্যারিসন বাংলাদেশে আসার একটি কারণ ছিল পুরান ঢাকার একজন কাজী যুক্তরাষ্ট্রে একটি কাগজ পাঠান। এটি বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ। মুসলিম পারিবারিক আইনের অধীনে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান। নোটিশ দেখে গ্যারিসনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।

ব্যারিস্টার সজিব মাহমুদ বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি নোটিশটি অবৈধ। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি রাজ্যের আইনে তাদের বিয়ে হয়েছিল। বিবাহবিচ্ছেদ রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা হতে হবে।

বাংলাদেশে আসার পর গ্যারিসন চলে যায় উত্তর সিটি করপোরেশনে। সিটি করপোরেশন থেকে নথিপত্র দেখে তারা বলেন, আসলে এমনটা হয় না। আমরা তখন কাজীর কাছে গেলাম। তিনি খুব একটা সহযোগিতা করেননি। আমাদের কাছে তার একটা অনুরোধ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী বিবাহিত। তিনি মুসলিম পারিবারিক আইনে নোটিশ পাঠালেও আইনত তা করতে পারেন না। আর নোটিশ জারির সময় ফারহানা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

তিনি বলেন, গর্ভবতী অবস্থায় নোটিশ পাঠানোর সুযোগ নেই। নোটিশের বিষয়ে তিনি একটি দেওয়ানি মামলা করেন। আর শিশুদের হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে হাবিয়ার কপারস।

About Zahid Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *