Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আদালতের বাহিরে মাইকে বক্তব্য দিলেন আসামি

আদালতের বাহিরে মাইকে বক্তব্য দিলেন আসামি

জেল বা আদালত থেকে পুলিশকে ফাকি দিয়ে অনেক আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে এবার আলোচনায় উঠে আসলো ভিন্ন ধরনের ঘটনা। হ‘ত্যা মামলায় রিমান্ড প্রাপ্ত আসামি আদালতের বাহিরে হ্যান্ড মাইক দিয়ে বক্তব্য দিলেন তার পক্ষবাদি লোকজনের উদ্দেশ্যে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

হ,ত্যা মামলার আসামিদের একদিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। জেলা কারাগার থেকে একটি প্রাইভেটকারে তাকে থানায় আনা হয়। সেখানে শত শত মানুষের ভিড়। রিমান্ড মঞ্জুর করা ব্যক্তি থানা চত্বরে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য রাখলেন, তিনি বলেন- আমি নির্দোষ।

এ সময় অভিযুক্তের হাতে হাতকড়া ছিল না। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা  ৭টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা ( Shailkupa ) থানায় এ ঘটনা ঘটে। শুরু হয়েছে তোলপাড়।

অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম শিমুল ( Shafiqul Islam Shimul ) শৈলকুপা ( Shailkupa ) উপজেলার দশম বগুড়া ( Bogra ) ইউনিয়নের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের ( Juba League ) যুগ্ম আহ্বায়ক। তার গ্রামের বাড়ি শৈলকুপা ( Shailkupa ) উপজেলার বারবাড়ি বগুড়া ( Barbari Bogra ) গ্রামে, তার বাবার নাম কুবাদ আলী।

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ভিন্নভাবে। শৈলকুপা ( Shailkupa ) সার্কেলের এএসপি অমিত বর্মণ ( Amit Varman ) জানান, জেলা কারাগার থেকে পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনার পর সেখানে শত শত মানুষ জড়ো হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে থেকে নবনির্বাচিত ১০ নং বগুড়া ( Bogra ) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল ( Shafiqul Islam Shimul ) পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য কথা বলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এমনটি হয়েছে। শৈলকুপা ( Shailkupa ) সার্কেলের এএসপি দাবি করেন, পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল না।

শৈলকুপা ( Shailkupa ) থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শিমুলসহ ( shimul ) পাঁচ আসামিকে দুপুরের দিকে একদিনের পুলিশি রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রিমান্ডের আসামিরা থানা চত্বরে হ্যান্ড মাইকে কিভাবে কথা বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি কাকতালীয়ভাবে ঘটেছে।

তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে এলাকার শত শত মানুষ থানার গেটে জড়ো হয়েছে। তাদের শান্ত করতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন শফিকুল ইসলাম শিমুল। এ জন্য পুলিশ তাকে উৎসাহ দেয়নি বলে দাবি করেন ওসি।

এ সময় অভিযুক্তের (শিমুল) হাতে হাতকড়া ছিল না বলে তিনি পরোক্ষভাবে স্বীকার করেন।

উল্লেখ্য, শৈলকুপা উপজেলার বগুড়ার ১০ নম্বর ইউনিয়নে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর থেকেই এলাকায় বিরোধ দেখা দেয়।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দিবালোকে পেঁয়াজ ক্ষেতে কল্লোল খন্দকার নামে এক যুবককে কুপিয়ে ও কুপিয়ে হ’ত্যা করা হয়। সে বড়বাড়ী বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে। নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে ৮২ জনকে আসামি করে ১২ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হ’ত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর বাদীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে।

বাদীর পক্ষে স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। পরে আফান ও সজিব নামে দুই আসামিকে আটক করে পুলিশ। শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ্বাস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া ও আখির মুন্সি নামে পাঁচ আসামি গত ২ মার্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৫ জনকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, রিমান্ডের আসামিরা মাইক্রোবাসসহ তিনটি প্রাইভেটকারে শৈলকুপা থানায় প্রবেশ করছে। এ সময় শৈলকুপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহসিন হোসেনসহ অন্যরা নড়াচড়া করছিলেন।

একপর্যায়ে পরিদর্শক (তদন্ত) মহসিন হোসেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে মাইক তুলে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিমুল কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে করমর্দন করেন এবং হ্যান্ডমিকে উদ্দেশ্য করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

রিমান্ডে আসামিদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত কল্লোল খন্দকারের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার (হ’ত্যা মামলার বাদী)। তিনি অভিযোগ করেন, “আমি মনে করি না এই ধরনের মামলায় আমরা ন্যায়বিচার পাব।” মিল্টন জানান, কল্লোল খন্দকার নিহত হওয়ার পর থেকে তিনি ও তার পরিবার ঘরের বাইরে রয়েছেন।

পুলিশের হ্যান্ড মাইক ব্যবহারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শৈলকুপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহসিন হোসেন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামিদের হাতে হ্যান্ড মাইক হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশের আইন অনুযায়ী কোন আসামি নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারের বাহিরে আনা হলে হাতকড়া লাগানো বাধ্যতা মূলক। তবে এ ঘটনায় আসামির হাতে কোন হাতকড়া না থাকায় ওই ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশের কাছে প্রশ্ন তোলেন অনেক সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ। এই প্রশ্নের জবাবে এএসপি অমিত বর্মণ জানান, এটি একটি কাকতালীয় ঘটনা এতে আমাদের কোন গাফিলতি ছিলও না । আসামির দলিয় লোকেরা অনেক সোরগোল তৈরি করছিল তাই ওই পরিস্থিতিকে শান্ত করতে আমরা এই সিদ্ধান্ত নেই। এই ঘটনার পর মামলার বাদী জানায়, চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল অনেক ক্ষমতাশীল লোক আমি মনে হয় ন্যায় বিচার পাবনা।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *