বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমান সময়ে অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দাবিতে সমাবেশ এবং আন্দোলন করার জন্য। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আ.লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামার জন্য বৈঠক করছে। ইতিমধ্যে বিএনপি দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে শক্তি অর্জন করেছে। ফের ৭ টি দলের সাথে ঐক্যবদ্ধ হলো বিএনপি।
সরকারকে ‘হটাতে’ যুগপৎ আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনে সম্মত হয়েছে বিএনপি ও সাতদলীয় জোট। আন্দোলন বেগবান করতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই কমিটি হবে; যার মাধ্যমে আন্দোলনের লক্ষ্য, ধারা, কর্মসূচি ও রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক হয়। সেখানে নেতারা এসব বিষয়ে একমত হন।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক চলে। পরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। সারা বিশ্বে আজ এই বার্তা যাবে যে, যারা রাতের আঁধারে ভোট চুরি করেছে, অনৈতিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে তাদের অপসারণ করতে বাংলাদেশের জনগণ বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবে। রাজনৈতিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শুধু এই স্বৈরাচারের পতন ঘটাবে না; রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে, সংবিধান সংস্কার করবে। আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোই একসঙ্গে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকার পতনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য। এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য, আমাদের পয়েন্ট, আমাদের কর্মসূচি, রূপরেখা সবই থাকবে। এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।
বিএনপি মহাসচিব বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করবো। বৈঠকে আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে এই কাজ শুরু করেছি। আমরা আশা করি আরও আলোচনার পরে রাষ্ট্র পরিবর্তনের বিষয়ে একমত হতে পারবো। এটিকে গতিশীল করতে আমরা পরে আরও কিছু আলোচনা করবো। আমরা নিশ্চিত যে শেষ পর্যন্ত আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাব। এই আন্দোলন হবে ইতিহাস গড়ার আন্দোলন, যেটা আপনাদের জন্য বড় সুখবর।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে পতনের লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য তৈরি করে আপাতত যুগপৎ আন্দোলনকে বেগবান করতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করতে পারব।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আমি দৃঢ় সংকল্পের সাথে বলতে পারি, আমরা একযোগে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। বলা যায় এখন থেকে আন্দোলনে আছি, আন্দোলনে থাকব। বিএনপির ভিশন-২০২০ তে বর্ণিত বিভিন্ন প্রস্তাবনার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবনার মিল রয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি নির্বাচনের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, এই সরকারের অধীনে আমরা কেউ কোনো নির্বাচনে যাব না। আমি যা দাবি করেছি তা হলো এই সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মো. রেজা কিবরিয়া বিদেশে এবং সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের বিদেশি দূতাবাসে কর্মসূচি থাকায় তারা বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। আর বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
গত আগস্টে যে রাজনৈতিক জোটগুলো তাদের আত্মপ্রকাশ করেছিল সেগুলো হলো গণতন্ত্রের মঞ্চে – জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। সরকার পতনের আন্দোলনের দাবিগুলো চূড়ান্ত করতে গণতন্ত্রের প্লাটফর্মের সঙ্গে এই সংলাপে বসে বিএনপি। ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠনের পর এটাই বিএনপির সঙ্গে তাদের প্রথম বৈঠক।
এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপির আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গণসমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলকে সুসংগঠিত করার জন্য আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে। দলের সক্ষমতার জন্য বড় ধরনের সমাবেশ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থাকবেন জানা যায়। এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে দলটি।
আড়াই ঘণ্টা বৈঠক শেষে আন্দোলনে নামা নিয়ে নেতাকর্মীদের সুখবর দিলেন ফখরুল