Monday , December 30 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আগে আমার রীশান খেলনা তৈরি করত, হঠাত গাড়ি তৈরির সামগ্রী দেখে ভয় পেয়েছিলাম: মা ফরিদা

আগে আমার রীশান খেলনা তৈরি করত, হঠাত গাড়ি তৈরির সামগ্রী দেখে ভয় পেয়েছিলাম: মা ফরিদা

ল্যাম্বরগিনি স্পোর্টস কারের মত গাড়ি তৈরি করে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন বগুড়ার ছেলে আব্দুর রহমান রিশান। তার বয়স ১৯ বছর । তরুণ বর্তমানে বগুড়ার একটি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যয়নরত।

12 তম শ্রেণির ছাত্র রিশান দাবি করছে যে এই গাড়িটি তৈরি করার পিছনে তার কোনও গুরু নেই বা তিনি ইউটিউবের কোনও সাহায্য নেননি। যাইহোক, গুগল থেকে ছবি দেখার পর, তিনি ল্যাম্বরগিনির এসভি এবং এসভিজে উভয় মডেলের সমন্বয়ে একটি গাড়ি তৈরি করেন। ফলে গাড়িটিকে সামনে থেকে Lamborghini এর SV মডেল এবং পেছন থেকে SVJ এর মত দেখায়।

রিশানের তৈরি গাড়িটির দৈর্ঘ্য ১১.৫ ফুট, প্রস্থ ৫ ফুট এবং উচ্চতা ৩.৫ ফুট।

রিশান তার গাড়ির নাম দিয়েছেন ‘লাভার প্রেস’। এত কম বয়সে এত চমৎকার গাড়ি বানিয়ে গ্রামের সবাই অবাক। তাই প্রতিদিনই গাড়িটি দেখতে তার বাড়িতে লোকজনের ভিড় জমে।

রিশানের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের পদ্মাপাড়া উত্তরপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম ইউনুস মিয়া। রিশান সুখনপুকুর সৈয়দ আহমেদ কলেজের বিএম শাখায় দ্বাদশ শ্রেণিতে উদ্যোক্তা উন্নয়ন বাণিজ্যে অধ্যয়নরত।

রিশান জানান, ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজে তার আগ্রহ ছিল। এর আগে তিনি খেলনা এক্সকাভেটর মেশিন, স্পিডবোট, হেলিকপ্টার, ড্রোন, এরোপ্লেন, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও স্পোর্টস কার তৈরি করেছেন। পুরোপুরি খেলনা গাড়ি তৈরি করতে পেরেই তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এরপর তিনি একটি সত্যিকারের স্পোর্টস কার তৈরির পরিকল্পনা করেন।

এই আধুনিক মডেলের গাড়িটি তৈরি করতে তার ১৫ মাস সময় লেগেছে বলে জানান রিশান। খরচ হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার এখনও ৮০ হাজার টাকা প্রয়োজন। 10 দিন হলে দরজার গ্লাস, হেডলাইট, পিছনের আলো এবং গাড়ির ভিতরে কিছু অবশিষ্ট কাজ অটো মেরামত হিসাবে দেওয়া যেতে পারে।

রিশান বলেন, মোটরসাইকেল কেনার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি বানানো শুরু করি। বগুড়ার ভাংরিপট্টি থেকে টায়ার, রিং, স্টিয়ারিংসহ সব যন্ত্রাংশ কিনেছেন। আমি চীন থেকে ইঞ্জিন এবং গিয়ারবক্স নিয়ে এসেছি। এছাড়াও পাইকারি হারে অ্যালুমিনিয়াম শিট, স্টিল শিট, কার্বন ফাইবার কিনুন। গাড়িটিতে দুটি সিট, স্টিয়ারিং হুইল, গান শোনার জন্য স্পিকার, কুলিং ফ্যান রয়েছে। এছাড়া চাবির পাশাপাশি সেলফ সিস্টেম দিয়ে গাড়ি চালু করা যায়। গাড়িটি ম্যানুয়াল মোডে চলে। আমি গাড়িতে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি। আমি পরে এই ইঞ্জিন পরিবর্তন করব.

গাড়িটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গাড়িটি সাসপেনশনের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়। গাড়ির সাসপেনশন বিরল। যার কারণে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। গাড়িটিতে ABS সিস্টেম ব্রেক রয়েছে। এটি তিন চাকায়ও চলতে পারে। এছাড়া গাড়ির সামনে যে চেসিস সিস্টেম দিয়েছি তার কারণে গাড়িটি পাঁচ টনের সমান ধাক্কা সহ্য করতে সক্ষম। আর এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য গাড়ির ইঞ্জিনের পেছনে।

রিশান আরও বলেন, গাড়ির বডি তৈরিতে কোনো লেদ ব্যবহার করা হয়নি। আমি হাতে চালিত মেশিনের সাহায্যে 15 মাস ধরে গাড়িটি বাড়ির ভিতরে তৈরি করেছি। গাড়ি তৈরির পর তা বের করে আনতে ঘরের দেয়াল ভাঙতে হয়েছে। গাড়ি বানানোর পর খুব ভালো লাগছে। আমি এই গাড়িটি মূলত আমার নিজের চলাচলের জন্য তৈরি করেছি। বিক্রি করব না। তবে কেউ যে কোনো মডেল দেখাতে চাইলে সে অনুযায়ী গাড়ি তৈরি করতে পারব বলে আমার এই আত্মবিশ্বাস আছে।

রিশান ভবিষ্যতে বগুড়া পলিটেকনিকে পড়তে চায়। সে একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কারণ ছোটবেলা থেকেই সে এগুলো করতে পছন্দ করে। এ কাজে তিনি শান্তি পান। ভবিষ্যতে রোবটিক গাড়িও তৈরি করতে চান তিনি। গাড়িতে কোনো সমস্যা হলে চালককে বলতে পারে গাড়ির কী সমস্যা।

রিশানের প্রতিবেশীরা জানান, এত কম বয়সে রিশান এত বড় জিনিস তৈরি করেছে, এটা সত্যিই অবাক করার মতো। কিন্তু যেহেতু এটা আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে তাই বিশ্বাস না করে উপায় নেই।

স্থানীয় এক ব্যক্তি রীশানের বাড়ির দেয়াল দেখিয়ে বলেন, দেখুন ছেলেটি ওই বাড়ির ভেতরে গাড়ি তৈরি করেছে। এরপর দেয়াল ভেঙে গাড়িটি বের করা হয়। তিনি গাড়ি চালাতেও পারতেন না। গাড়ি বানানোর পর গাড়ি চালানো শিখেছেন।

রীশানের মা ফরিদা বেগম বলেন, গাড়ি তৈরির সামগ্রী নিয়ে বাসায় এসে ভয় পেয়েছিলাম। কারণ সে কখনো সামনাসামনি গাড়ি তৈরি হতে দেখেনি। আগে রীশান খেলনা তৈরি করত। এখন বড় জিনিস বানাতে পারবে কিনা সন্দেহ ছিল। অনেক দিনের পরিশ্রমের পর আমার ছেলে আমার গাড়ি তৈরি করেছে।সেই প্রথম আমার পাশে গাড়িতে বসেছিল।আমি চাই আমার ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হোক।

রিশানের বাবা ইউনুস মিয়া বলেন, কলেজে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল কেনার জন্য আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছিল রিশান। এরপর ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে রিশানকে টাকা দেই। পরে জানতে পারি, মোটরসাইকেল কেনার বদলে তিনি গাড়ি তৈরি শুরু করেন। রিশানকে তার গাড়ি তৈরি করতে ব্যাংক ঋণ, জমি বন্ধক এবং গরু বিক্রি করতে হয়েছিল। গাড়ি তৈরির বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গাড়ি তৈরি করে চলে যান রিশান।

About Nasimul Islam

Check Also

কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা

ঢাকার নবাবি আমলের মহামূল্যবান হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’ নিয়ে রহস্য আজও অমীমাংসিত। ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংক সদরঘাট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *