গত ৪ নভেম্বর নিউমার্কেট থানার গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় মিরপুর সুপার লিঙ্ক লিমিটেডের একটি বাসে আগুন দেয়। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশের ঢাকা মহানগর (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- তানভীর আহমেদ (২৭), দেলোয়ার হোসেন (৫১) ও মোঃ ফারুক হোসেন (৪৩)।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তানভীর আহমেদ ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের গ্রন্থাগার সম্পাদক। দেলোয়ার হোসেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি এবং ফারুক হোসেন বিএনপির সক্রিয় সদস্য।
ডিবি জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তানভীর জানায়, তারা আগুন দেয়ার পর সিনিয়র নেতাদের কাছে ভিডিও পাঠাতো। লন্ডন ও ঢাকার সিনিয়র নেতাদের কাছেও ছবি ও ভিডিও পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, বাসে আগুন দেয়া তিনজনকে আটক করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর নিউমার্কেট যাত্রী ছাউনির কাছে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ডিবি (উত্তর বিভাগ) তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। ওইদিন গ্রেফতারকৃত তানভীর আহমেদই বাসে আগুন দেয়।
ওইদিন বাসে আগুন দেওয়ার পর সে তার ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে তার এক বন্ধুকে আগুন দেওয়ার কথা জানায়। কথোপকথনে তানভীর লিখেছেন, আগুন দিয়ে কী হবে? আমরা আগুনে পুড়ছি এবং যারা লন্ডনে আছেন তারা ভালো আছেন। উল্টো আগুন দিতে গিয়ে আমরা ধরা পড়ছি।
এমন কথোপকথন তিনি করেছেন। তাকে যখন ডিবিতে নিয়ে আসা হলো তখন তিনি স্বীকার করেছেন এটি তিনি লিখেছেন।
তানভীর ডিবিকে বলেন, আমরা আগুন দিচ্ছি, ককটেল নিক্ষেপ করছি কিন্তু কারাগারে আমাদের দেখার কেউ নেই। যারা আদেশ দিচ্ছে তারা কোথাও লুকিয়ে আছে বা বিদেশে অবস্থান করছে।
তানভীরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, অনেকের নাম ও নম্বর পেয়েছি। জানা যাবে তানভীরের সঙ্গে আর কারা ছিলেন।
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আগুন দেওয়ার পর দলের সিনিয়র নেতাদের ছবি ও ভিডিও দেখাতে হবে। আগুন লাগানোর সময় মুখে মাস্ক ও রুমাল ব্যবহার করতে হবে। যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরাতে হবে। নিয়ম হলো আগুনটা লাগানোর পরে বড় ভাইদের খুশি করার জন্য টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ককটেল কিনে এনে ককটেল নিক্ষেপ করছে আবার কোথাও পেট্রল ঢেলে আগুন দিচ্ছে।
হারুন বলেন, ডিবির বিভিন্ন দল অনেককে আইনের আওতায় এনেছে। তাদের মধ্যে তারা আদালতে তাদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের সাহায্য কারা করছে তাদের নামও আমরা পেয়েছি।
তিনি বলেন, কোনো বড় ভাইয়ের কথায় যদি আগুন লাগান, ককটেল নিক্ষেপ করেন আসামি-তো আপনিই হবেন। টাকা পেয়ে ধরা পড়ার পর বড় ভাইদের নাম বললে কোনো লাভ হবে না। যারা আগুন দেবেন তারাই ধরা পড়বেন, তারাই মামলা খাবেন আর বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গোয়েন্দা প্রধান হারুন যারা ভাংচুর করছে তাদের বলে যে সে যার গাড়িতে আগুন লাগাচ্ছেন তার হয়তো জীবনের শেষ সম্বল বিক্রি করে প্রতিদিনের রোজগার হিসেবে তিনি বাসটি চালান। তারা যে বাসে আগুন দিচ্ছেন সেটা আসলে একজন মানুষের স্বপ্নকে পুড়িয়ে দিচ্ছেন। তার চলার আর পথ রইল না। জনগণের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে জনগণের কথা ভেবে আগুনের পথ থেকে সরে আসুন। অন্যথায় পুলিশ, ডিবি পুলিশ এই কাজের জন্য আপনাকে অবশ্যই গ্রেফতার করবে। লুকিয়ে থাকলেও পার পাওয়া যাবে না। বাকিদেরও আমরা আইনের আওতায় আনব। যে গর্তেই ঢুকে থাকুক নাশকতাকারীদের গ্রেফতার করা হবে।
লন্ডন থেকে কোনো নির্দেশনা আসছে কি না জানতে চাইলে হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। তারা বলছেন, আগুন লাগার পর সিনিয়র নেতাদের কাছে ভিডিও পাঠানো হয়েছিল। এতে তিনি লন্ডন ও ঢাকার সিনিয়র নেতাদের কথাও বলেন।
গ্রেফতারকৃতরা আগুন লাগানোর পর অনুতপ্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুন লাগার পর তারাও উদ্বিগ্ন। ধরা পড়লে তাদের বড় ভাইয়েরা জামিনের জন্য কাজ করবে কি না তা নিয়েও শ’ঙ্কায় রয়েছেন গ্রেফতারকৃতরা।
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, গতকাল সোমবার হরতাল ছিল। হরতাল চলাকালে প্রচুর যানবাহন চলাচলে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ আগুন, ককটেল পছন্দ করে না। আমরা বারবার বলছি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে পুলিশ ডিমোরালাইজড হবে না।