আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এবং দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ডিসেম্বরের সম্মেলনে সভাপতি পদে থাকবেন জীবন্ত কিংবদন্তি শেখ হাসিনা। তবে সাধারণ সম্পাদকসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো রদবদল হবে কি না বা কারা আসবেন বা বাদ পড়বেন, সেটাই প্রধান প্রশ্ন। এ নিয়ে নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে।
যেকোনো উচ্চ মার্গের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলীর মধ্যে সততা, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও দূরদৃষ্টি ও চরিত্র থাকতে হয়। অতীতে যারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তাদের সবার মধ্যেই এসব গুণ বিদ্যমান ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন। সৈয়দ আশরাফের মতো নির্লভ সত্তার চরিত্রও এই পদে ছিলেন।।
দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ প্রেক্ষাপটে তিনি ওই পদে এসেছিলেন। তিনি কি সেই পদেই থাকবেন? যদি থাকেন, তবে আর কোনো প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু তা না হলে তার উত্তরসূরি কে হবে সেই প্রশ্ন অবধারিতভাবেই এসে যায়।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্দরমহলের সঙ্গে যারা পরিচিত তাদের মতে, জাহাঙ্গীর কবির নানক এই পদে সবচেয়ে বেশি দৌড়াচ্ছেন। এর পাশাপাশি বাহাউদ্দিন নাসিমের নামও শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মিছিলে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক, মাহবুব উল আলম হানিফ, হাসান মাহমুদ, আবদুর রহমান ও দীপু মনি। এছাড়াও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বর্তমানে দলের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ ও মির্জা আজমও আগ্রহীদের মধ্যে নাম ঢুকিয়েছেন বলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সাক্ষ্য দিচ্ছে।
আলোচনা আছেন প্রধানমন্ত্রীর স্বজনখ্যাত দুই নেতার নামেও।। তাদের একজন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। আরেকজন, নূরে আলম চৌধুরী।
আবার এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম সামনে আসছে। তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। তার বাবা জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানও আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। আসলে প্রতিটি সম্মেলনের এক সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে কে ভালো হতে পারে তার আভাস দেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি আশা করেন, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।
সম্প্রতি বাহাউদ্দিন নাসিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, আগামী বছরের সংসদ নির্বাচন এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি ও রাজনৈতিক অপশক্তি ঠেকাতে কার্যকর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবে দল।
অন্যদিকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক দলীয় সভাপতির কোর্টে বল ঠেলে মিডিয়াকে বলছেন, শেখ হাসিনা সম্মেলন নিয়ে কাজ করছেন। এমন বক্তব্যে দলে গণতন্ত্র আছে কি না, নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।
সাংস্কৃতিক মনোবোধের সাথে রাজনৈতিক সুবোধের একটা সুসমন্বয় আওয়ামী লীগ আজীবন রক্ষা করে গেছে। ২০১৬ সালে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন সাধারণ সম্পাদক হন, তখন তিনি দলের চাহিদা পূরণ করেন এবং যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হন। সময়ই বলে দেবে, দলের দ্বিতীয় সেরা নেতা কে! কারণ, আওয়ামী লীগে রাতারাতি বড় নেতা হওয়া যায় না। দলের বর্তমান ৮১ সদস্যের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক পদে কোনো কোনো নেতা দীর্ঘদিন ধরে আছেন। তাদের অনেকে এবার বাদ পড়তে পারেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামীলীগের পরবর্তিতে সাধারন সম্পাদকে আসার শর্ত হিসেবে ক্লিন ইমেজ থাকার বিষয়টি প্রাধন্য পাবে বলে জানা যায়। তবে এ পদে অনেকের নাম উঠে এসেছে এবং অনেকে হওয়ার জন্য জন্য চেষ্টা করছেন।