আওয়ামী লীগের সমন্বয়কের দায়িত্ব পেলেন নানক ও বাহাউদ্দিন নাসিম

বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনায় ভারতে গোপন বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। ১৫ জানুয়ারি কলকাতার পার্ক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের খবর সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার এক ফেসবুক পোস্টে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সহিংসতায় যুক্ত শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুধু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাই নয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারাও অংশ নেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, অসীম কুমার উকিল, যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেন, আল নাহিয়ান খান জয়, গোলাম রাব্বানী, লেখক ভট্টাচার্য, শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, সিদ্দিকী, নাজমুল আলমসহ আরও অনেকে। এছাড়া বৈঠকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মেহের আফরোজ শাওন ও চিত্রনায়িকা সোহানা সাবার উপস্থিতিও দেখা গেছে।

বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার নানা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয় এবং বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়ানোর জন্য দায়িত্ব বণ্টন করা হয়।

জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাসিমকে এই পরিকল্পনার সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলন ও নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।

এছাড়া, ছাত্রলীগ নেতা হাসিনার ড্রাইভারের ছেলে মোহাম্মদ রুবেলকে পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাজারীবাগ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মৃত তোরাব আলীর ছেলে লিটন নেপাল থেকে কলকাতা হয়ে বৈঠকে যোগ দেন এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার দায়িত্ব পান।

মোহাম্মদপুর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেকুজ্জামান রাজীব ও সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাগ্নে আসিফকে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাবেক এমপি যুবলীগ নেতা মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে পুরান ঢাকা, চাঁনখারপুল ও উত্তরাসহ পুরো ঢাকায় সহিংসতা ছড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ওপর মগবাজার, গুলিস্তান, তেজগাঁও, বাড্ডা ও বনশ্রী এলাকায় নাশকতা সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাবেক এমপি ওয়াখিল উদ্দিনের অনুসারীদের বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় সহিংসতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুকে বনানী ও মিরপুর এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া আলো আসবে গ্রুপের অ্যাডমিন চিত্রনায়িকা সোহানা সাবাকে ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আর মেহের আফরোজ শাওনকে গোটা পরিকল্পনার সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


ভারতে ঠাঁই নিয়েও শান্তিতে নেই হাসিনা

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়ার পর থেকে তার অবস্থান গোপন ছিল। তবে সম্প্রতি তিনি ভারতের মাটি থেকেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক বক্তব্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশে। ওই রাতেই বিক্ষুব্ধ জনতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়।

এতে ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়। দুই দেশের দূতদের তলব ও পাল্টা তলবের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে আসছে সপ্তাহে ওমানে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

সূত্রের দাবি, বৈঠকে ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হবে যাতে শেখ হাসিনা আর ভারতে বসে কোনো বক্তব্য না দেন। একই সঙ্গে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। ফলে ভারতে আশ্রয় নিয়েও তিনি স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না।