বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কীভাবে ফিরতে পারে তা নিয়ে ভারতে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ বিষয়ক ভারতের বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা অংশ নেন। ওই বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘‘বাংলাদেশে চলমান ভারতীয় প্রকল্প ও রি-সেটেল আওয়ামী লীগ’ (আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন)। প্রথমত, বৈঠকে বাংলাদেশে চলমান ভারতীয় প্রকল্পের যথাযথ ও নিরবচ্ছিন্ন বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে বলা হয়। এছাড়া ভারতের সাথে শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যকার হওয়া সমঝোতা স্মারকগুলো (এমওইউ) পুনর্বিবেচনা করা হলেও সম্পাদিত চুক্তিগুলো থেকে বর্তমান সরকার যেন সরে না যায় সেটি নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়।
২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকের ‘মিনিটস অব দ্য মিটিং’ জার্মানির বন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য মিরর এশিয়ার হাতে এসে পৌঁছেছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, সেখানে সাংবাদিক ও আমলাদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন অধ্যাপককেও তাদের মতামত দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বৈঠকে ছিলেন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ), বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন ও ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (আইডিএসএ) প্রতিনিধিরা। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ওই বৈঠকের মূল আলোচনা গড়ায় আওয়ামী লীগের ‘রিসেটেলমেন্ট’ (পুনর্বাসন) নিয়ে। সেখানে উপস্থিত একজন প্রতিনিধি জানান, তারা ধারণা করছেন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু বিএনপি ঠিকই পাঁচ বছরের মধ্যে নানা অজনপ্রিয় কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক বাস্তবতায় তখন জনগণের সমর্থন আওয়ামী লীগের দিকে ঘুরে যাবে। আলোচনায় ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার ‘ভূমিধ্বস’ জয়ের উদাহরণ টানা হয়।
ভবিষ্যৎ আওয়ামী লীগের জন্য সে পথ খুলে দিতে বর্তমান সংস্কার প্রক্রিয়া ও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে তিনি বাংলাদেশে গিয়ে ভারতের ‘অরাজনৈতিক বন্ধুদের’ পরামর্শ নেয়ার কথা বলেন।
উপস্থিত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের আগে ও পরে বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা দিল্লি, কলকাতা ও আগরতলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন।তারা সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সমর্থন চেয়েছেন। ভারতে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হবে কি-না সে ব্যাপারে ‘অল পার্টি পার্লামেন্টেরিয়ান কমিটি’র অনুমতি লাগবে।
তার জবাবে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ ভারতে বসে দল চালিয়েছে। কলকাতা, আগরতলায় তারা দলীয় মিটিং করেছে, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কলকাতায়। তিনি দাবি করে বলেন, প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্কটকালে ভারতে দলীয় কর্মকাণ্ড করতে দেয়ার ইতিহাস নতুন নয়। তিনি ভারতে আওয়ামী লীগ সংগঠিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার পক্ষে মত দেন।
তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বলেন, ভারতে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা যেন গোপনে হয় এবং তা গণমাধ্যমও যেন জানতে না পারে। অন্যথায় বর্তমান সরকারের সাথে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ওই বাঙালি কূটনীতিক বলেন, হাসিনাকে ২০১৪ সাল থেকে যে আমরা টিকিয়ে রেখেছি এই অভিযোগ ভারত অস্বীকার করলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তা বীরদর্পে বলে বেড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া দরকার বলে যোগ করেন তিনি।