নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু অনেকটা হতবাক করেছে এই উপজেলার ইউপি নির্বাচনের ফলাফল। এ উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন আর তার মধ্যে ৮ টি ইউনিয়নেই পরাজয় ঘটেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীকের শোচনীয়ভাবে পরাজয় ঘটেছে যে বিষয়টি নিয়ে খোদ দলের মধ্যেই এখন গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।
দলের মধ্যকার কোন্দলের কারনে নৌকার পরাজয় ঘটেছে, এমনটাই মনে করছেন অনেক নেতাকর্মী। গত রবিবার অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর এ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
আহমেদ হোসেন যিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তার বাড়ি পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী নামক ইউনিয়নে। একই উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীরপ্রতীক) বাড়ি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এই দুই নেতার উপজেলায় বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে টিকতে পারেনি, পরাজয় বরন করতে হয়েছে। ৮ টি ইউপিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ‘স্বতন্ত্র’ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্বধলা ইউনিয়নে (সদর) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুল কাদির ৩৫৯ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। সাত প্রার্থীর মধ্যে তিনি পঞ্চম অবস্থানে। এই ইউপিতে মোট ভোটার ২৫ হাজার ৩৫৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১৭ হাজার ৬০৫টি। নিয়ম অনুযায়ী জামানত ফেরত পেতে প্রদত্ত ভোটের ৮ শতাংশ পেতে হয়। নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ ছাড়া ঘাঘড়া, আগিয়া, বিশকাকুনী ও গোহালাকান্দা ইউনিয়নে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর তালিকাতেও নাম নেই নৌকা প্রার্থীর।
পূর্বধলা উপজেলার ভোটার ও নেত্রকোনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রতন বলেন, পূর্বধলায় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। একপক্ষ স্থানীয় এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের অনুসারী। কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ হোসেনের সমর্থক আরেকটি পক্ষ। প্রায় সব কয়টি ইউনিয়নেই এমপির অনুসারীরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আহমদ হোসেনের সমর্থকরা তা মেনে নিতে পারেনি। তাই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই। টানা তিনবারের এমপির সমর্থকদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। যে কারণে নৌকার ভরাডুবি।
পূর্বধলা ইউনিয়নের নৌকার পরাজিত প্রার্থী মো. আব্দুল কাদির বলেন, নৌকার মনোনয়ন পেলেও দলের স্থানীয় নেতারা আমার বিরোধিতা করেছে। স্থানীয় এমপি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। দুই গ্রুপের দুজন আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন।
নেতারা তাদের বিরোধিতা করে মনোনয়ন দেননি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে কিভাবে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তারা, এমন কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নিজ যোগ্যতার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে যোগাযোগ করার পর মনোনয়ন লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। এতে পূর্বধলার যে সকল নেতারা রয়েছেন তাদের কোনো হাত নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা জানতে চাইলে আমি তাদেরকে কোনো রাখঢাক না রেখেই বলবো কীভাবে ছি’টকে পড়তে হয়েছে।
এরশাদুর রহমান যিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন বলেন, নির্বাচনে আমরা কোনো ধরনের দুর্নীতি করিনি। দলের অভ্যন্তরে মানুষের বিরোধিতা করেছে যার কারনে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছে যেটা অপ্রত্যাশিত। এই খানে আমার কোনো হাত নেই