Thursday , February 20 2025
Breaking News
Home / Countrywide / আওয়ামী লীগের কর্মসূচি, কঠোর অবস্থানে সরকার

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি, কঠোর অবস্থানে সরকার

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নীরব থাকা আওয়ামী লীগ নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলটি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে, যার মধ্যে রয়েছে হরতাল, বিক্ষোভ ও অবরোধ। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গণহত্যার দায় স্বীকার করে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। সরকারের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, জনগণই তাদের প্রতিহত করবে।

দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ করা হবে, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হবে। তবে এর আগে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম দেখা যায়নি। দলের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, কেউ কেউ পলাতক রয়েছেন, আর কয়েকজন নেতা কারাগারে আটক আছেন।

গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই সেখানেই অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। চলমান মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় তাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকার গত ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ যতদিন না গণহত্যার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চায় এবং বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসে, ততদিন তাদের কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই গত জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এত বড় একটি হত্যাকাণ্ডের পরও আওয়ামী লীগ অনুশোচনা না করে বরং মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে, যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

ওদিকে, আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ঘোষণার পর বিএনপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, এতগুলো মানুষ হত্যার পর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা অনুশোচনাহীন এক নেত্রীর আর্তচিৎকার ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের হত্যা করেছে এবং পুরস্কারের আশায় এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই, বরং তিনি দেশে ফেরার সুযোগ পেলে দেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান সংগঠক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, এত মানুষ হত্যা করার পরও শেখ হাসিনা কীভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করেন? রাজধানীর কাকরাইলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে আয়োজিত একটি প্রদর্শনী পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় হত্যাযজ্ঞের পরও যদি কোনো অপরাধী প্রকাশ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে, তাহলে সেটি দেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়।

এর আগে ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ রাজপথে নামার ঘোষণা দিলেও দলটির কোনো নেতা-কর্মীকে কার্যকর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগও ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আওয়ামী লীগের এসব কর্মসূচি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

About Nasimul Islam

Check Also

শেকৃবিতে ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা উৎসব বন্ধের নির্দেশ, প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের নেপথ্যে কী?

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *