বাংলাদেশের প্রবীন রাজনীতিবিদ যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন তাজউদ্দীন আহমদ, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম প্রবীন একজন নেতা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালিন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বয়িত্ব পালন করেন। মুলত এই কারনেই তাকে মুজিবনগর সরকার নামেও অনেকে চিনে থাকেন। তৎকালীন সময়ে তার প্রধানমন্ত্রীর দ্বয়িত্ব পালন এবং একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার পদচারনা এর কারনে তাকে মানুষ শ্রদ্ধা ভরে স্বরন করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ৯৭তম জন্মদিন শনিবার। সোহেল তাজ এই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে ‘অন্তত একটি পোস্ট’ আশা করেছিলেন।
‘রাজনীতি সাতকাহন’ শিরোনামে দলের সাপ্তাহিক কর্মসূচি ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া পোস্টের মন্তব্যে তাজউদ্দিন-পুত্র এ কথা বলেন।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে সোহেল তাজ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের আজ ৯৭তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে অন্তত একটি পোস্ট আশা করছিলাম।
এক ঘণ্টার মধ্যে সোহেল তাজের মন্তব্যে পাঁচ হাজারের বেশি লাইক পড়ে। প্রায় ৫০০ উত্তর এসেছে।
তাজউদ্দীন ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে তাকে হত্যা করা হয়।
ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৩ সালে, তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত হওয়ার পরের বছরই বেঙ্গল মুসলিম লীগের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাজউদ্দীন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। জাতীয় ভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৬৪ সালে এলএলবি পাস করেন।
১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে বেশি পরিচিত। স্বাধীনতার পর, তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম এক রাজনীতিবিদের নাম। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অন্যতম একজন প্রবীন নেতা ছিলেন পচাত্তরে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হয়, তার সাথে আরো তিন জাতীয় নেতা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ (এএইচ) কামরুজ্জামান, এম মনসুর আলী এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় ওই তিন নেতার সঙ্গে তিনি নিহত হন।