বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আসছে ঘনিয়ে। আর এই কারনে বেশ কিছু নতুন দল অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে রাজনীতির অঙ্গনে। বিশেষ করে সব থেকে বেশি সমালোচনা হচ্ছে একটি দলকে নিয়ে। আর সেই দলটি হলো বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট। দলটির নাম আলাদা হলেও জানা গেছে এই দলটি মূলত বিএনপির রাজনীতির আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর এই কারণেই এই দলটির নিবন্ধন নিয়ে হচ্ছে বেশ আলোচনা সমালোচনা। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এ নিয়ে দেয়া সাবেক সেনাকর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান এর স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো হুবহু:-
সম্প্রতি বিএনএম (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট) বা বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নামে একটি দল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এই দলের ৩১ জনের কমিটিতে ৮ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং বেশীরভাগই অতীতে বিএনপির রাজনীতির সাথে সংযুক্ত ছিলেন।
কথা উঠতে পারে, দেশে এতো দল থাকতে নতুন দলের কী এমন প্রয়োজন পড়লো হঠাৎ করে? ভাগযোগের এই দেশে নতুন যোগী ভিখ পাবে কী করে তাই ভাবছিলাম! প্রাথমিকভাবে আমার কাছে এটা সরকার কর্তৃক বিএনপিকে ভাংগার ষড়যন্ত্র বলেই মনে হয়েছে।
সংবাদ, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং আমার নিজস্ব ভাবনা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক তবে।
১. আলোচ্য দলে একজন সেনা অফিসারের নাম দেখলাম যিনি বেশ কিছুদিন আগে আমাকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তিনি বিশুদ্ধ রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তিনি জানান, জেনারেল এরশাদের প্রাক্তন পত্নী বিদিশার ব্যানারে তারা নাকি জিএম কাদেরকে উচ্ছেদ করবেন এবং বাংলাদেশেকে তারা কোয়ালিটি রাজনীতি উপহার দেবেন।
আলোচ্য মিলিটারি অফিসার আমাকে বললেন, তুমি যেভাবে লেখালেখি কর তাতে দেশের জন্য কোন অবদান তুমি রাখতে পারবানা। তোমার এখন জাতীয় পার্টি (বিদিশার অংশে)তে জয়েন করা উচিত। তিনি আরও বললেন, এরিক এরশাদ হলো বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যত। এরিকের ছাতার তলে দলে দলে যোগদানের কথা জানালেন তিনি।
সব শুনে আমি তাকে সরকারের পুতুল আখ্যা দিয়ে এসব হঠকারী পথ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।
২. আজ সেই একই ব্যক্তি আমাকে কল করে বললেন যে, তিনি বিএনএম এ যোগ দিয়েছেন বিশুদ্ধ রাজনীতির লক্ষ্যে। আরে ভাই শোনেন, বিএনএম তো দাবী করছে তারা আসল জাতীয়তাবাদী (বিএনপির মতাদর্শের ভিত্তিতে)! তাইলে কথা হইলো, কয়দিন আগেই আপনি জাতীয় পার্টিকে শুদ্ধ রাজনীতি মনে করেছিলেন আর এখন বিএনএমকে মনে করছেন শুদ্ধ রাজনীতি? এই দুই দলের পলিটিকাল মতাদর্শ এক হওয়ার কথা নয়। ভাই, আগে আপনি সুনিপুণভাবে জাতীয় পার্টি দুই টুকরা করার প্রজেক্টে সরকারের পক্ষে কাজ করেছিলেন আর সেই প্রজেক্ট ফেইল করায় এখন বিএনপি ভাংগার কাজ পেয়েছেন। এই সামান্য কূটকৌশল বুঝার জন্য ব্রেইন সার্জন হওনের দরকার নাই!
৩. আলোচ্য ভদ্রলোক আমার বিশ্বাস অর্জনের জন্য অতীতের মত আমার কোর্সমেট জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে কিছু কথাও বললেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশে অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারগণ আমার সাথে প্রয়োজনীয় কুশলাদি বিনিময়ের জন্য কথা বলতে চাইলেও কেউ ম্যাসেঞ্জারে কথা বলেন না কারণ এনটিএমসি বা আমার প্রাক্তন বন্ধু জিয়াউল আহসান সেটা রেকর্ড করে ফেলবে তাই। কিন্তু তিনি এসব ভয় পাননা! নিশ্চিন্তে আমার কাছে জিয়ার আসল চারিত্রিক বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারছেন। সেলুকাস!
৪. তিন/চারদিন আগে বিএনএম এর আরেকজন সদস্য আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি কাজে থাকায় কল রিসিভ করতে পারিনি। এরপর আমি স্যারকে কল ব্যাক করলাম। তিনি আমাকে বললেন বিএনপি তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিচ্ছে না তাই তারা আলাদা হয়ে যাচ্ছেন। তারেক রহমান সেনা অফিসারদের সম্মান দিয়ে কথা বলেন না। আমি স্যারকে বললাম, এই সময় যখন বিএনপি এককভাবে আন্দোলন করে সরকারকে কোণঠাসা করে ফেলছে আর সাধারন জনগন এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে তখন আপনাদের বিএনপি ত্যাগ করা কিন্তু মানুষ বেঈমানী হিসাবেই নেবে। এই পর্যায়ে স্যার আমাকে ব্যাপক হিসাব নিকাশ করে বললেন, এই আন্দোলন কিছুদিন পরই দেখবে নিস্তেজ হয়ে গেছে। এবং সবশেষে স্যার বললেন আমি যেন তার দলে যোগ দেই।
৫. এবার আসি আমার দুইজন কথিত ডিজিএফআই এর মূখপাত্রের বক্তব্যের বিষয়ে। দুটি ভিন্ন ডিজিএফআই এর সোর্সের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। এদের একজন আমেরিকায় বসবাস করেন, অন্যজন বাংলাদেশে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে বিএনপির এই আন্দোলন যাই করুক কোন লাভ হবেনা। তারেক রহমান টাকা পেলেই খুশি আর আওয়ামী লীগের টাকার কোন অভাব নাই। সামিট গ্রুপ, এস আলম ভারতের আদানী এগুলো কী তাদের টাকা? সব আওয়ামী লীগের টাকা! তারেক রহমান কত টাকা চায়? কত টাকা সে নিতে পারবে? যা চাইবে তা’ই দিয়ে তাকে ৭০/৮০ টা সীট দিয়ে একটা নির্বাচন করা হবে তখন ওয়েস্ট আর কথা বলতে পারবেনা, মেনে নিতে বাধ্য হবে।
-আর যদি তারেক রহমান এই ডিল করতে না চান? কী হবে তাহলে?
-আরে ভাই, আওয়ামী লীগ তো কাঁচা না, সেটারও একটা ব্যবস্থা করা আছে। বিএনপির ৮০ জন সিনিয়র নেতা অলরেডি আওয়ামী লীগের পকেটে। তারা এবার যদি এমপি না হতে পারে তবে বয়েসের কারণে তাদের আর সুযোগ নাই। এরা তখন বিএনপির আদর্শ নিয়ে একটা দল নিবন্ধন করে তাদের ৮০ টা সীট দিয়ে বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় থাকবে।
৬. এখন দেখেন তো হিসাব মিলে কীনা! তারেক রহমান ডিলে না আসলে আওয়ামী লীগের সেই গৃহপালিত বিএনপির ৮০ জনই কী এই বিএনএম? আমার পাপী মন, আমার মনে কু গাইছে! ইনারাই তো তেনারা! বুঝাইতে কী পারলাম? তবে শুনেন ভাইলোগ, সেই ৮০ জন এখন ৩১ জন হয়েছে এবং এর মধ্যে দুই একজন ছাড়া সবই অপরিচিত মুখ!
৭. এই লিখাটি আমি শুরু করেছিলাম ১০/১২ দিন আগে। কাজের ব্যস্ততায় শেষ করা হচ্ছিল না। গত কয়েকদিন আগে একেবারে হর্স’স মাউথ থেকে শুনলাম এই বিএনএম ইজ ফান্ডেড বাই ডিজিএফআই। আমার সাথে কথা বলা দুই অফিসারের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের এই নতুন দলের জন্য রিক্রুটমেন্ট করার সময় বলেছে তাদের দল ফান্ডেড বাই ডিজিএফআই। আমার পাপীতাপী হিসাবটা মিলেই গেল তাইলে!
আমি রাজনীতি বিষয়ে আগে কখনোই আপডেটেড থাকতাম না তবে গত কয়েক বছর ধরে আপডেট থাকার চেষ্টা করছি। যারা নিয়মিত রাজনীতি করেন তাদের এ বিষয়ে আরও গভীর ধারণা থাকার কথা। আমার মতে বিএনপির আন্দোলনের সাথে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা এখন প্রকটভাবে দৃশ্যমান। এই সময়ে সরকার/ডিজিএফআই এর ট্র্যাপে পা দিয়ে বিএনএম তৈরী করা একেবারে আনাড়িপনা হয়ে গেছে বলে আমার ধারণা।
রাজনীতিতে শুভবুদ্ধি আর সততার চর্চা হোক। শঠতা আর ব্যাকস্ট্যাবিং তো অনেক হইলো। দেশ দেউলিয়া হওয়ার আগে এবার নাহয় দেশকে একটু ভালবাসি।
প্রসঙ্গত, এ দিকে এই দলটির নিবন্ধন নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা জানা যায়নি এখনো। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন এই দলকে নিবন্ধন দিবে কি না তা নিয়ে রয়েছে বেশ সংশয়।