সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানে একটি বিষয় নিয়ে চলছে ব্যপক আলোচনা, মুলত রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী ইয়াশা মৃধা সুকন্যার সন্ধান মিলেছে। তবে তিনি পরিবারে কাছে ফিরতে চান না। মায়ের প্রতি রয়েছে নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ। এমনকি তাকে তার মা বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন। তবে মেয়েকে বিক্রি করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেছেন ইয়াশার মা নাজমা ইসলাম লাকী। ইতি মধ্যে মা মেয়ের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের কারনে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেছেন, যে মেয়েকে আইফোন-১২ প্রো ম্যাক্স কিনে দিতে পারি, যাকে এইচপির এক লাখ টাকার ল্যাপটপ কিনে দিতে পারি, সেই মেয়েকে বিক্রির কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে সঙ্গে একান্ত আলাপকালে ইয়াশা মৃধা সুকন্যার মা নাজমা ইসলাম লাকী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি নিজের বাড়িতে থাকি। যে মেয়েকে আইফোন-১২ প্রো ম্যাক্স কিনে দিতে পারি, যাকে এইচপির এক লাখ টাকার ল্যাপটপ কিনে দিতে পারি। যে মেয়েকে দুই-আড়াই লাখ টাকার ডিভাইস কিনে দিতে পারি, সেখানে তিন/চার লাখ টাকাতো কিছুই না। এগুলো যদি আমি নাও দিতে পারতাম তাহলে ওর চাচারাও দিতে পারতো। মেয়েকে বিক্রি করে দেবো এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।
তিনি বলেন, আপনারা পারলে আমার এলাকা, স্থানীয় মানুষ ও কোচিং সেন্টারসহ সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে দেখেন। আমি মা হিসেবে কেমন তারাই জানাবেন বলেও দাবি করেন তিনি।
নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, আমি যদি ওকে (ইয়াশা) দুইদিন আটকে রাখি, দুই তলায়, তিন তলায়তো ওর চাচারা থাকেন। ওতো চাচাদের কাছে ওর কথা বলতে পারতো। আমি ওকে বালিশ চাপা দেবো? মা হিসেবে আমি দুইটা মাস দ্বারে দ্বারে ঘুরছি মেয়েটাকে পাওয়ার আশায়। আমি যদি এমন কাজ করতাম তাহলে এমনভাবে না দৌড়ায়ে বলতাম ‘ভালো হইছে মেয়ে চলে গেছে!’
তিনি বলেন, এটা কি কোনো মায়ের পক্ষে সম্ভব মনে করেন? এত কষ্ট করে জন্ম দেওয়ার পর লালন-পালন করে বড় করার পর কোনো মা এমন করতে পারে বলে আমার জানা নেই।
মেয়ের এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে অন্য কারও প্ররোচনা আছে কি না জানতে চাইলে ইয়াশার মা বলেন, আমি এখনো বিষয়টা বুঝছি না। ডিবির কাছে আমার মেয়ে আছে। তারা সঠিকভাবে তদন্ত করুক। আমার নামে সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা হচ্ছে। আমার এই যে বাড়ি-ঘর, টাকা-পয়সা কে নেবে? আমার সন্তানইতো নেবে। এই সন্তানের দাম মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা? এটাতো আমার জন্য কোনো অ্যামাউন্টই না।
নাজমা ইসলাম লাকী আরও বলেন, যে ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ে (পালিয়ে) গেছে তারা বারবার আমাকে বলছে যাতে মামলা উঠিয়ে নেই। মেয়ের সঙ্গে আমি কথা বলতে পারিনি। দুই মাস তাকে দেখিনি। ডিবিকে বলেছিলাম অন্তত ১০ মিনিট কথা বলার সুযোগ করে দিন। আমি একটু জড়িয়ে ধরতে চাই ওকে। আমার বিশ্বাস আমাকে দেখলে ওর যত রাগ-ক্ষোভ সব উঠে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, ইয়াশাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন তাকে কার হেফাজতে দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করবো।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মুখোমুখি হয়ে ইয়াশা মৃধা সুকন্যা বলেন, তিনি পরিবারে কাছে ফিরতে চান না। মায়ের প্রতি রয়েছে নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ।
তিনি বলেন, আমি পরিবারে ফিরতে চাই না। সেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। আমার মা আমাকে নানা ধরনের নির্যাতন করেন। তিনি আমাকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন।
ইয়াশা বলেন, বিয়ে করার জন্য আমাকে জোর করা হচ্ছিল। মা আমাকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছিলেন। রাতে আমি ভয়ে ঘুমাতে পারতাম না। আমাকে বালিশ চাপা দেওয়া হবে! নানার বাড়ি গেলে, তারাও আমাকে একই কথা বলতেন। বিয়েটা করে ফেল, সাড়ে তিন লাখ টাকা পাবি। লাগলে আরও টাকা বাড়িয়ে দেবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন থেকে নিখোঁজ ছিলেন রাজধানী ঢাকার সিদ্ধেশরী গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী ইয়াশা। পরে ২০ আগস্ট মা নাজমা ইসলাম লাকী মেয়ের সন্ধানে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ঘটনায় সুকন্যার মায়ের করা মামলায় তার বন্ধু ইসতিয়াক এখন কারাগারে।