অ্যাডভোকেট আনিসুল হক হলেন বাংলাদেশের আইনজীবি ও রাজননিতিবীদ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বতায় জয় লাভ করেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইনমন্ত্রী। এমন একটি সম্মানীয় পদে অধিষ্ঠিত হবার পর থেকে সততার ও নিষ্ঠার সহিত তিনি তার দাহিত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেছেন আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেস বিল উত্থাপনের আগে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের আপত্তির জবাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না। মাননীয় স্পিকার, আমি আপনার মাধ্যমে বলতে চাই। তিনি যে বিচারের কথা বলছিলেন, আপনি কি ভুলে গেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ঘটনা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের ১৭ সদস্যকে হত্যার পর কী ঘটেছিল? তাদের কি বিচারের প্রয়োজন ছিল? আমি জানি না তারা কী? এখন বলবে, হয়তো তারা বলবে যে ক্ষতিপূরণ আদেশ দ্বারা বন্ধ করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, তারা বিচার পাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর এখন তাদের কাছ থেকে বিচার শিখতে হবে? এখন তারা হয়তো বলবেন এটা খন্দকার মোশতাক করেছিলেন। তারা ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। বারবার তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু ক্ষতিপূরণ বাড়ায়নি। এবং এখন তারা আইন শেখায়। তার কাছ থেকে আমাকে আইন শিখতে হবে..?
শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ সংসদের ১৮তম (বাজেট) অধিবেশনে সুপ্রিম কোর্ট জাজেস বিল উত্থাপনের আগে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন স্পিকার ড. এর আগে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আওয়ামী লীগ সরকারের বারবার আইন পাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্টের জাজেস বিলের বিরোধিতা করছি না। যদিও সরকার প্রায়ই নিজের সুবিধার জন্য সংসদে বিল পাস করে। কিন্তু বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আইনের বৈষম্য ঘটছে। একইসঙ্গে পবিত্র কোরআনের ন্যায়বিচার সংক্রান্ত সূরা মায়েদার আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যারা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো আইন তৈরি করে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ হয় না। কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি, সাজাপ্রাপ্ত হয়েও সংসদ সদস্য হাজী সেলিম চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন মেনেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বারবার বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করলেও কোনো লাভ হয়নি, আদালত বলেছে, এমন কোনো সুযোগ নেই। এখানে আইনে বৈষম্য করা হয়েছে।
একই সঙ্গে হারুন আরও বলেন, আমরা দেখছি পুলিশের সজাগ দৃষ্টিতে সরকারি দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু বিরোধী দলকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনের শাসন বলে কিছু নেই, তাহলে এই আইনের কী লাভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনা একটি সভ্য রাষ্ট্রে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটে। আমরা দেখেছি কিভাবে একজন ছাত্র তথাকথিত ছাত্র গুন্ডাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে, এখনও পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার কাদের জন্য এই আইন করছে?
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বারবার বিএনপির এমপিকে থামতে বলেন। স্পিকার বলেন, আপনার আপত্তি কোথায়? বিল সম্পর্কে কোনো বক্তব্য থাকলে আলোচনা করুন। কিন্তু হারুন নিজের মতো করে কথা বলতে থাকে। এ সময় সংসদে হট্টগোল হয়। হারুন বলেন, বিলটি বিচারকদের কাছে বাড়ানোর বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু বিচার বিভাগ হাইজ্যাক হচ্ছে এবং বিচার বিভাগের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ চলে আসছে।
জবাবে সংসদে দাঁড়িয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ যা বলেছেন তা শুনলে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। এর কারণ হলো, আমি যে জ্ঞান দিয়েছেন তাতে আমি বুঝি না- আইনের কিছুই বুঝি না? বিএনপি শাসনামলে যা হয়েছে তার নিজের বোঝার কথা। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, এখন বলতে পারি জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট হত্যার বিচার হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে, জেল হত্যার বিচার চলছে। ” আর বিচারকরা এই সাহস করে বলেই আজ তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য আইন করা হচ্ছে। আর আপনি আইন পড়াচ্ছেন। মাননীয় স্পিকার, বিএনপির কাছ থেকে আমাকে আইন শিখতে হবে..? এরপর আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, একজন আইনমন্ত্রী হলেন দেশের আইন সম্পর্কে বিজ্ঞ একজন ব্যক্তি। তিনি আইন সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন। তাকে আইন শিখতে গেলে সেইটা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না বলে মনে করেন অনেকে। দেশের আইন-কানুন প্রনয়ণে তার ভূমিকা অপরিসীম।