আইনজীবীদের জন্য প্রতিটি জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন ও আইনজীবী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধুর আইনি দর্শন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো বাধা থাকবে না। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। আমরা প্রতিটি জেলায় আইনজীবীদের জন্য বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে গ্রেফতার করেছিলো। আমি প্রশংসা করি যে, যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন আইনজীবীরা পাশে ছিলেন। প্রতিনিয়ত আমাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে দাঁড়িয়েছেন।
‘পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল, চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। পরে এটা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, স্মার্ট জুডিশিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে ই-জুডিশিয়ারি চালু করা হয়েছে। কারাগারে ভার্চুয়াল আদালত বসানোর ব্যবস্থা করেছি। আমি আইন সংশোধন করে আধুনিক করেছি। সেখানে আইনজীবী ভবন নির্মাণের দাবি উঠেছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা এলে আমরা ধীরে ধীরে সব জেলায় করতে পারব। তবে এখানে শর্ত আছে, আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও তহবিল থাকতে হবে। আপনি একটি তহবিল তৈরি করুন, সেখান থেকে আপনার কিছু দিন আমি কিছু দেব।
এদিকে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের অনেক নেতাকে হত্যা করেছে। ২০১৩ সালে, অগ্নিসংযোগের হামলা আরও ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করেছিল। এই অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের মামলা দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানাই। আগে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল, এখন আন্দোলনের সুযোগে সামনে এসেছে। তারা যেন সাজা পায়। এটা আপনাদের কাছে আমার দাবি।
বাংলাদেশে গ্যাস বিক্রির নিশ্চয়তা দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত। তারা দেশের টাকা পাচার করেছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছে। সারাদেশে বোমাবাজি করেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। নিজের দেশে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বানিয়েছে। খুনিদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতাসীনরা উদ্বৃত্ত দিয়ে কিছু মানুষের ভাগ্যের উন্নতি করেছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যে নয়।২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। বিচার বিভাগের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, মোস্তাক জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। টিকতে পারেনি। ক্ষমতা দখল করেন জিয়া। ইনডেমনিটি জারি করে আমাদের বিচার থেকে বঞ্চিত করেন। নির্বাচন পক্রিয়া ধ্বংস করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও শুরু করেছিলেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দিয়ে যান। নারীদের বিচারে যাওয়ার পথ সুগম করে। সদ্য স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেন। এছাড়া সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আত্মনিয়োগ করেছেন। এ সময় তিনি বিচার বিভাগের দিকেও নজর দেন। মাত্র ১০ মাসে একটি সংবিধান দিয়েছেন। তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী ছিলেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের বিচারিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১৯৭২ সালে বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি তাদের ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন এবং আইনজীবীদের জন্য ৫০,০০০ টাকার একটি তহবিল গঠন করেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও আইন সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।