আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুরোধ অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের নীট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২,৬৮০ মিলিয়ন ডলার থাকতে হবে। কিন্তু তা সম্ভব হবে না বলে মঙ্গলবার সফররত আইএমএফ মিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ চায় আইএমএফ এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনুক।
আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি দল আজ বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উভয় বৈঠকেই বাংলাদেশের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আইএমএফ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অনুরোধ অনুযায়ী আইএমএফ রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা শিথিল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আজ প্রথম আলো আয়োজিত অর্থনীতিতে সংকট কেন, উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, রিজার্ভকে কোনোভাবেই ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নামতে দেওয়া যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সায়েমা হক বিদিশাও একই মন্তব্য করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। প্রথম কিস্তিতে ৭টি কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় দেওয়া হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করার কথা আগামী মাসে। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ার আগে প্রথম কিস্তির ছাড়ের মূল্যায়ন করতে আইএমএফ দল এখন ঢাকায় রয়েছে।
আইএমএফের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, জুনে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ থাকতে হবে ২ হাজার ৪৪৬ মিলিয়ন ডলার। তবে এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর বাইরে সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫৩০ মিলিয়ন ডলার। এটাও পূরণ হয় না। ডিসেম্বরে ২৬৮০ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকার কথা থাকলেও এই শর্ত পূরণ করতে পারবে না বলে আগেই জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এর আগে গনমাধ্যমকে বলেন, আইএমএফের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করা হলেও কিছু ব্যর্থতা রয়েছে। যেহেতু রিজার্ভ কিছুটা কম। রাজস্ব আদায়ও কম।
মোট রিজার্ভ, ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ৬ (BPM ৬) এবং প্রকৃত রিজার্ভ—বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের এ তিন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার পর কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট রিজার্ভ এবং বিপিএম ৬ পদ্ধতির হিসাব প্রকাশ করছে। যাইহোক, প্রকৃত বা নেট রিজার্ভ তথ্য জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদিও প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য আইএমএফকে জানাচ্ছে।
গত জুনে দেশের মোট মজুদ ছিল ৩ হাজার ১২০ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাব ব্যবস্থা বিপিএম ৬ অনুযায়ী তা ছিল ২ হাজার ৪৭৫ মিলিয়ন ডলার। একইভাবে গত সেপ্টেম্বর শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭০৫ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু বিপিএম ৬ অনুযায়ী তা ছিল ২ হাজার ১১৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার।
তবে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তারপর থেকে দুই বছরে, রিজার্ভ প্রতি মাসে গড়ে $১ বিলিয়ন কমেছে।
সম্প্রতি রিজার্ভ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা যা বলেছেন তার মধ্যে রেহমান সোবহানের মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। গত ৯ অক্টোবর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অতিথি হিসেবে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে প্রকৃত রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এই রিজার্ভ যদি ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলতে থাকে, তাহলে আইএমএফের সহায়তা পাওয়া সম্ভব হবে না। রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ক্রমাগত কমছে তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল খুঁজে পান বলে জানান রেহমান সোবহান।