প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, একদফা দাবি থেকে সরে না এলে বিএনপি নির্বাচনি বাস মিস করবে। কারণ জনগণ তাদের আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে না। অংশগ্রহণও করছে না। তাদের আন্দোলন সীমিত হয়ে আসছে। এখন তাদের আন্দোলন ফেসবুক আর ইউটিউবে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিএসআর সেন্টারের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘রিপোর্ট অন সিএসআর ইন বাংলাদেশ-২০২৩ সার্কুলার ইকোনমি: এ নিউ পাথ টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবিলিটি’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
CSR কেন্দ্র তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন CSR অনুশীলন তুলে ধরে। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে কিভাবে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য একসাথে কাজ করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অনুষ্ঠানে অংশ নেন ফাহমিদা খাতুন, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক, বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান এবং সিএসআর সেন্টারের সিইও শাহমিন এস জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিএসআর সেন্টার বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ফারুক সোবহান।
বিএনপির একদলীয় আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে তা কখনো সফল হবে না। কারণ জনগণ তাদের সঙ্গে নেই।
সালমান এফ রহমান বলেন, জ্যাক সুলিভান যিনি আমেরিকান ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। আমেরিকান সিস্টেমে কয়েকজন আছেন যারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার সবসময় কিন্তু উনাদের সিস্টেমে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। কিন্তু তিনি আমাদের দূতাবাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। আর আমরা সেই ঘোষণাও দিচ্ছি না। হোয়াইট হাউস থেকে এই ঘোষণা এসেছে। আরও বলা হয়েছে, আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। বিদেশিরা কী চাচ্ছেন? একটা হলো— প্রেসিডেন্ট বাইডেন কি বলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে, জ্যাক সুলিভান কি বলেছেন? একটাই কথা— যেটা তারা বারবার বলে আসছেন, নতুন কথাটা না। তাদের কথা হলো— অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ একটা পিসফুল নির্বাচন চায়। আমরা বলেছি- আমরাও একই জিনিস চাই।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে, কেউ অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন থেমে থাকবে না। রাষ্ট্রপতি বাইডেনের সাথে কী কথা হয়েছিল? তাদের একমাত্র চাওয়া বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাদের এবং আমাদের সরকারের দাবি একই। এখানে কোনো দ্বিমত নেই। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।
বিদেশীরা বর্তমান সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর ও গুজব আখ্যায়িত করে সালমান এফ রহমান বলেন, বিএনপি ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারণা চালাচ্ছে।
বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের কাছে যান, জনগণ চাইলে জনগণের শক্তিতে ক্ষমতায় আসুন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
সেলফি নিয়ে বিএনপির সমালোচনা প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি অব চান্সে হয় নেই। এটা আগে থেকেই অনুষ্ঠানের সাইড লাইনে কর্মসূচির আলোকে হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। আমাদের ব্যবসা আগের মতোই চলছে। তারা আসছে, আমরা যাচ্ছি। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওয়াশিংটন ডিসিতে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথেও দেখা করেছি। ঢাকায় এলে তারা আমার সঙ্গে দেখা করে, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। অর্থাৎ সবকিছু আগের মতোই চলছে।
সালমান এফ. রহমান বলেন, “নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি একটি ভুল ধারণা। তারা শুধুমাত্র একবার র্যাবকে নিষিদ্ধ করেছিল। এরপর আইন অনুযায়ী আমাদের যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা আমরা নিচ্ছি। র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমাদের ব্যবসা যেমন চলার ছিল তেমন চলছে।তিনি আরও বলেন, তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞা নয়, ভিসা সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তারা বলেন, যে নির্বাচনের বিরুদ্ধে কাজ করবে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে বাধা দেবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এটা তারা বারবার স্পষ্ট করেছে। এমনকি গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস বলেছে, আমরা কোনো দলের পক্ষে নই। নির্বাচনে বাধা দিলে যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারা এটা দেবে।
তিনি বলেন, এই স্যাংশান বা লিমিটেশন শুধু বাংলাদেশে নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা তাদের আইন অনুযায়ী কাজ করে। কিন্তু বিএনপি বারবার বলে আসছে ভিসা সীমাবদ্ধতা শুধু আওয়ামী লীগকে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চাইলে তার দেশের আইন অনুযায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তাদের একটা ব্যবস্থা আছে, তাদের আইন আছে, তারা সেই অনুযায়ী কাজ করবে। আমি যদি তার দেশে যেতে না চাই তাহলে নিষেধের প্রশ্নই আসে না।
তিনি বিএনপির উদ্দেশে বলেন, এবার কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও সহ্য করব না। গত নির্বাচনে তারা করেছে। কিন্তু তারা পাস করেনি। এবার সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। তার আগে আমরা অ্যাকশনে যাব।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কীভাবে বিভিন্ন সেক্টর তাদের ব্যবসায় সার্কুলার ইকোনমি যুক্ত করে ব্যবসার টেকসইতা নিশ্চিত করতে পারে তা চলতি বছরের সিএসআর প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। কৌশলগত কর্পোরেট অংশগ্রহণের মাধ্যমে সিএসআর ব্যবসা এবং সমাজের উপকার করে এবং সেই সঙ্গে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে, যা কিনা এসডিজির সঙ্গে সম্পর্কিত।