প্রেমের টানে এক দেশ থেকে পাড়ি জমাচ্ছে বিশ্বের অনেক নারী পুরুষ। নিজের দেশ ছেড়ে ভিন দেশে যেয়ে ভালোবাসার মানুষের সাথে সারাজীবন এক সাথে থাকবে বলে ঘড় বাঁধে। কিন্তু সেই বন্ধুই যদি করে বেইমানি তাহলে তার থেকে কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না। ঠিক তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ান এই নাগরিকের সাথে। বাংলাদেশে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এই অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক।
তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের উপর একটি বই লিখতে বাংলাদেশে এসে হালিমা নামের এক মহিলার প্রেমে পড়েন এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ম্যালকম আর্নল্ডের সাথে তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ‘সিডনি ডেইলি’ ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আউয়াল খান নামের এক ব্যক্তি।
তার লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ম্যালকম আর্নল্ড ২০০১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারা সুন্দরবন বেড়াতে গেলে, আর্নল্ডের সাথে দেখা হয় হালিমা বেগমের, যিনি মংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিওতে কাজ করেন।
আর্নল্ড সাত-আট দিনের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন। তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে হালিমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন। কিন্তু ইংরেজি না জেনে তার চিঠির উত্তর দেওয়া হালিমার পক্ষে সবসময় সম্ভব ছিল না। কিন্তু হালিমা জানতেন তিনি তাকে ভালোবাসেন। ২০০৩ সালে, হালিমার জরায়ু ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন হালিমাকে তার অসুস্থতার কথা চিঠির মাধ্যমে জানাতে বাধ্য করা হয়। হালিমার অসুস্থতার কথা শুনে ম্যালকম ২০০৩ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে আসেন এবং নিজের খরচে হালিমার চিকিৎসা করেন। হালিমা সুস্থ হলে তিনি তাকে প্রস্তাব দেন। হালিমাও বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন।
বিয়ের পর খুলনায় বসবাস শুরু করেন এই দম্পতি। তারা ১৮ বছর ধরে খুলনার সোনাডাঙ্গায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। স্বামী পরিত্যক্তা হালিমা সেই যাত্রায় নতুন জীবন পেলেও বাংলাদেশে থাকার দাম নিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ম্যালকম আর্নল্ড। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে ফিরে আসেন। কিন্তু হালিমার জন্য আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে হয়েছে। এদেশের নোনা মাটিতে অভ্যস্ত হালিমার মেয়ে রূপসার পাড়ে। এরপর তিনি বাংলাদেশেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার দেশ অস্ট্রেলিয়ায় তার সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে খুলনায় চলে আসেন।
কিন্তু খুলনার এক বন্ধু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সহজ-সরল ম্যালকম বাড়ি বিক্রি করে তার বেশিরভাগ অর্থ হারিয়ে ফেলে। তারপরও ছবি বিক্রির আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। কিন্তু করোনা তার ছবি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। ধীরে ধীরে জমে থাকা টাকাও ফুরিয়ে যায়। ফলে চিকিৎসার পাশাপাশি সংসার চালানোর মতো টাকা নেই তার। এদিকে, ম্যালকমের হার্ট ব্লক রয়েছে এবং তিনি ঠিকভাবে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারেন না। ম্যালকম ডায়াবেটিস, হাড়ের ক্ষয় এবং হৃদরোগে প্রায় অচল। হাত অচল থাকায় বাংলাদেশের মানুষের মুখ, খুলনা শহরের রূপসা ঘাটের কাছে দেখা শীতের কম্বলে ঢাকা মানুষের দৃশ্য উঠে আসে না। আগের ছবিগুলোও ঘরে অবিক্রীত।
অন্যদিকে, কোন আর্থিক চিকিৎসা নেই, আপনি একটি বাড়ি ভাড়া নিতে পারবেন না। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো হয় না। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু সাহায্য পাওয়া গেলে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তিনি চাইলে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে পারতেন। আপনি অবসর ভাতা এবং চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন। কিন্তু ম্যালকম বললেন, বাংলাদেশকে আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি বা মাতৃভূমি মনে হয়। দেশের মানুষ, প্রকৃতি ও সবুজের সৌন্দর্য এবং মানুষের আন্তরিকতায় তিনি মুগ্ধ।
তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই এ দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা ও ভালোবাসা বাড়ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। কিন্তু এদেশের মানুষের সামর্থ্য ও আতিথেয়তা কোথাও পাওয়া যায় না। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বাংলাদেশেই থাকতে চান। তবে তার ভিসার মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ম্যালকমের বইয়ের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তার স্ত্রী হালিমা বলেন, “বিয়ের পর ম্যালকম তার কাঙ্খিত বইটি শেষ করেছেন।” বইটির পাণ্ডুলিপি প্রকাশের জন্য ঢাকার একটি প্রকাশনায় জমা দেওয়া হয়। তবে বইটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। ম্যালকম বলেছিলেন যে তার জীবনের একমাত্র ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপর তার অপ্রকাশিত বই প্রকাশ করা।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। বাংলাদেশিরা জরুরি পরিস্থিতিতে সে দেশে চাইলে প্রায় সব ধরনের সহায়তা পান। সে দেশের একজন নাগরিক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে বিনা চিকিৎসায়, অর্ধাহারে, অনাহারে জীবনযাপন করছেন। তাই অস্ট্রেলিয়ার সকল প্রবাসীদের কাছে অনুরোধ, আসুন আমরা এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়াই।
প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ান এই নাগরিক বিশ্বাস করেই তার সব ছেড়ে এসেছিলেন বন্ধুর কাছে। তবে তার তো জানা ছিল না বন্ধুর মনে রয়েছে তার বন্ধুর মনে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে।