Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী সাদ এখন এলাকা জুড়ে আলোচনায়

অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী সাদ এখন এলাকা জুড়ে আলোচনায়

ভিনগ্রহের এলিয়েনের কথা আমরা শুনেছি, তার ছোয়াতে এক বুদ্ধিহীন বালক হয়ে ওঠে মেধাবী এবং পেয়ে যায় অতিমানবীয় শক্তি। মেধায় দূর্বল ছেলেটি অবাক করতে থাকে তার সহপাঠিদের, রাতারাতি হয়ে যায় দারুণ মেধাবী। সে যে সমস্ত বিষয় দেখাতে শুরু করে তাতে চোখ কপাল উঠে যায় আশে পাশের সকল মানুষের। কঠিন সকল গাণিতিক সমস্যাগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সমাধান করে ফেলে ছেলেটি।

এলিয়েনের হাতের স্পর্শে একজন কিশোর বালকের ‘বিস্ময় বালক’ হয়ে যাওয়ার ঐ ধরনের যে কাহিনী সেটা বাস্তবের নয় , কাহিনীটি বলিউডের এক সয়েন্সফিকশন সিনেমার। তবে সেই সিনেমার মতো অতটা বেশি কিছু না হলেও এক বালক তার মেধাশক্তি দিয়ে অনেকটা চমক সৃষ্টি করেছেন। ঐ বালকের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। তার নাম সামিউন আলিম সাদ বয়স সাত বছরের কিছু বেশি। ২০২০ সালের জানুয়ারীতে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ওয়ানে তাকে ভর্তি করে দেয় তার অভিভাবকেরা। বিশ্বব্যাপী চলমান পরিস্থিতির কারণে গেল প্রায় দুই বছর যাবৎ তেমনভাবে শ্রেনীতে উপস্থিত থেকে পাঠ নিতে পারেনি। কিন্তু সাদ থেমে থাকেনি, বাড়িতেই পুরাদমে চালিয়ে যায় পড়াশোনা। আয়ত্ব করে নেয় অনেক কিছু। সাদ ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করে বেশ ভালোভাবে আয়ত্ত করে ফেলে।

মানচিত্রে বিভিন্ন দেশ, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগরের অবস্থান নিমেষে দেখিয়ে দিতে পারে। ইংরেজিতেও পৃথিবীর গঠন, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরিসহ বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বিষয়ের বর্ণনা করতে পারে দক্ষতার সঙ্গে। চোখের পলকে এঁকে দিতে পারে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মানচিত্র। বলতে পারে প্রতিটি দেশের চারপাশের সব দেশের নাম। সাদ রপ্ত করেছে মহাকাশের চেনা গ্রহ, উপগ্রহের নাম ও অবস্থান। বীজগণিত আর জ্যামিতিরও অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে সে।

সাদ কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী এ এইচ এম আলিমের ছোট ছেলে। মা আয়েশা আক্তার চার্লি কলেজ শিক্ষক। বাড়িতে গিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন সাদের মা-বাবার সঙ্গে। সাদের বাবা আব্দুল আলিম জানান, বড় বোন প্রমি গৃহশিক্ষকের কাছে ইংরেজি পড়ত। তখন সাদের বয়স তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। তখনই সে ইংরেজি বই পড়তে চাইত। তখন তাকে নিজের ফোনে ইংরেজি বর্ণমালা শেখার অ্যাপস ডাউনলোড করে দেন। তখন থেকে সাদ মা-বাবার সহায়তা নিয়ে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে ইংরেজি ভাষা শেখা শুরু করে। বাধা না দিলেও নেহাত শিশু বলে তাঁরা সে কী দেখছে তার ওপর সব সময় নজর রাখতেন। কয়েক মাসের মধ্যে সাদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইংরেজি পড়তে শিখে যায়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সে বড় বোনের গণিত বই থেকে যেকোনো বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান করে দিয়ে বাড়ির সবাইকে অবাক করে দিতে থাকে সাদ। ২০২০ সালে স্কুলে ভর্তির পর মাত্র দেড় বছরে একে একে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব গণিত বইয়ের সব বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান করে দেখিয়েছে সে।

সাদের মা আয়েশা আক্তার চার্লি জানান, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর স্কুল থেকে পাওয়া বই সাদ তিন দিনেই পড়া শেষ করে ফেলে। তিন দিন পর সে বলে, ‘এই বই আমার পড়া শেষ।’ তাঁরা ছেলের কথা শুনে প্রথমে গুরুত্ব দেননি। পরে যাচাই করতে গিয়ে তার মুখস্থ করার ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে যান। সাদ এরপর দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনে দিতে আবদার করে। কৌতূহলী হয়ে মা-বাবা তাকে দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনে দেন। এবারও দুই-তিন দিনের মধ্যে সব বই পড়া শেষ করে ফেলে সে।

এভাবে চলতে থাকে। মাত্র দেড় বছরেই প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব বই পড়ে শেষ করে ফেলে সাদ। তবে তার বেশি আগ্রহ ভূগোল, গণিত ও জ্যামিতি, মহাকাশ, পদার্থবিদ্যা এবং মানবদেহ নিয়ে।

স্থানীয় মোস্তবাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিশু সাদ অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। আমি নিজে তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে ক্লাস নাইনের বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান খুব সহজেই করতে পারে। সব কিছু ইংরেজিতে বর্ণনা করতে পারে সে।’

ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অলোক কুমার সাহা বলেন, ‘এত মেধাবী শিশু খুবই বিরল। এ ধরনের ট্যালেন্টেড শিশুদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত কম বয়সে এমবিবিএস ডিগ্রি শেষ করার এক বছরের মধ্যেই অধ্যাপক হওয়া সম্ভব। তবে সাদ প্রকৃতই সুপার ট্যালেন্ট কি না তা নিশ্চিত হতে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।’

সাদ পরিবারের বড়দের সহায়তায় একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে মহাকাশ, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট আপলোড করেছে। তার স্বপ্ন, বড় হয়ে সে একজন গণিতবিদ অথবা মহাকাশ বিজ্ঞানী হবে।

উল্লেখ্য, সাদকে সেখানকার স্থানীয়রা অনেকের তুলনায় একজন মেধাবী হিসেবে বিবেচনা কর থাকে। তারা জানিয়েছে সাদের এই মেধার পরিচয় শুধু তার জীবন থেকে পাওয়া বিষয় নয়, সে সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকেও অনেক কিছু পেয়েছে। তারা সাদকে নিয়ে গর্ব করে থাকে। তার অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, সাদের পড়াশুনার প্রতি শিশুকাল থেকে অনেক আগ্রহ, সে জানার জন্য প্রায় সব সময় প্রশ্ন করতে থাকে। আর নতুন কিছু পেলে সে সটা নিয়ে অনেক আগ্রহী হয়ে ওঠে। সে ইন্টারনেট দুনিয়ার সহায়তা নিয়ে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করে। আমরা তার জন্য গর্বিত।

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *