সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে এক তরুণকে বিয়ে করেন কলেজ শিক্ষিকা। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন ওই শিক্ষিকা কারন ওই তরুণের তার থেকে বয়সে অনেক ছোট। প্রচালিত সমাজ ব্যবস্থায় এটির গ্রহনযোগ্যতা নেই বললেই চলে। এ সমাজ ব্যবস্থায় অসম বিয়ে মেনে নেওয়া হয় না সে জন্য বেশ কটূক্তির স্বীকার হন ওই শিক্ষিকা। বয়সের ব্যবধানই কি কাল হলো কলেজ শিক্ষিকার বলে বিভিন্ন মহলে ধারনা করা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয়, তারপর প্রেম, গোপনে বিয়ে। বিয়ের পর ছাত্র মামুন ও নাটোরের কলেজ শিক্ষক খায়রুন নাহারের জীবন ভালোই চলছিল। তবে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর তাদের বিয়ে হলেও চলতি বছরের ৩১ জুলাই তাদের বিয়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে সময় দেশজুড়ে তাদের বয়সের পার্থক্য নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়। ভাইরাল হওয়ার ঠিক দেড় মাস পর ভাড়া বাসা থেকে ওই শিক্ষকের লা/শ উদ্ধার করা হয়।
রোববার (১৪ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে নগরীর বালারীপাড়া এলাকা থেকে খায়রুন নাহারের লা/শ উদ্ধার করা হয়। তার মৃ/ত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। কেউ কেউ বলছেন তাকে হ/ত্যা করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, মানসিক অবসাদে তিনি আ/ত্মহত্যা করেছেন। তবে নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, বয়সের পার্থক্যের কারণে সমাজের সমালোচনা ও কটূক্তি তাকে বিষণ্ণতার দিকে নিয়ে যায়; যার শেষ পরিণতি ‘আ/ত্মহত্যা’।
তরিকুল ফাহিম নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মন্তব্য কি তাহলে গন্তব্য ঠেকিয়ে দিল? বয়সের ব্যবধানই কি তাহলে কাল হলো? ধিক্কার এই নষ্ট সমাজকে।’
মোরশেদুল আলম লিখেছেন, ‘সমাজের গ্লানি থেকে যদি এ শিক্ষিকা আ/ত্মহত্যা করেন, তবে মনে রাখবেন, ফেসবুকে তাকে নিয়ে আপনার ট্রোলিং ও ব্যঙ্গ করা পরোক্ষভাবে দায়ী। বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করে এ নারী যেন চরম অন্যায় করে ফেলেছেন! তার সম্পর্কে ফেসবুকে ট্রেইল একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে মানসিকভাবে টিকে থাকা কঠিন। নিশ্চয়ই সমাজের নষ্ট বাসিন্দাদের কারণে ওই শিক্ষিকা রাস্তায়ও ঠিকমতো চলতে পারেননি। কী ক্ষতি হয়, একটা মানুষকে নিজের মতো বাঁচতে দিলে? কী ক্ষতি হয়, দুটো জীবন এক হয়ে ভালো থাকলে?’’
আহসান কামরুল লিখেছেন, মন্তব্য ঠিকই গন্তব্য ঠেকিয়ে দিলো। নিজের চেয়ে কম বয়সী এক যুবককে বিয়ে করা শিক্ষিকার লা/শ উদ্ধার করা হয়েছে। যদি সে সামাজিক অবসাদের কারণে আ/ত্মহত্যা করে, তবে মনে রাখবেন এই আ/ত্মহত্যার জন্য আপনিও দায়ী। সমাজ কটূ কথা অব্যাহত না রাখলে তিনি হয়তো ভালোভাবে বেঁচে থাকতেন। এ ছাড়া তিনি যদি হ/ত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তদন্তপূর্বক বিচার হোক।’
সাবিহার ইসলাম সিনহা লিখেছেন, ‘অনেককে দেখেছি যারা এই শিক্ষককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন, তাদের অনেকেই নিজেরাই হারাম কাজে জড়িত। এই শিক্ষিকাকে নিয়ে যারা বাজে মন্তব্য করেছেন, যার কারণে তিনি আ/ত্মহত্যা করেছেন, তারা সবাই দায়ী। মানুষ হতাশাগ্রস্ত হলে এই সিদ্ধান্ত নেয়।
সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘সমাজের সমালোচনা বা কটূক্তি একজনকে আ/ত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায়। একজন ৪০ বছর বয়সী পরুষ একজন ১৮ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করলে সমালোচনা করা যায় না। সেখানে স্ত্রীর বয়স বেশি হলে সমাজের মানুষ মেনে নিতে পারে না।
এদিকে নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপনারা জানেন, এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বহুল আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। মানসিক চাপের কারণে এটি আ/ত্মহত্যা কি না, আমরা তদন্ত করছি।