গেল বেশ কিছু দিন ধরে ভারতের কোলকাতার একটি বিষয় নিয়ে চারিদিকে হচ্ছে নানাবিধ আলোচনা সমালোচনা। কোলকাতার সাবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একেবারেই ঘনিষ্ঠ বান্ধবি অর্পিতা গ্রেফতার হয়েছেন। তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে প্রায় ২২ কোটি টাকারও বেশি নগদ অর্থ। আর এরপর থেকেই সবখানে এ নিয়ে চলছে বেশ তোলপাড়।
এ দিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর দুটি ফ্ল্যাটে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) সূত্রের বরাত দিয়ে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ পাচারের সম্ভাবনার খবর প্রকাশের সাথে সাথেই তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। বাংলাদেশে পার্থের প্রভাবের ক্ষেত্র অনুসন্ধান করার পর, বাংলাদেশি গোয়েন্দারা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে, যারা তার স্বার্থে কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। এই তালিকায় একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার একজন সদস্য, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে চিহ্নিত সাবেক সেনাপ্রধানের নাম রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কথায়, পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে পাওয়া টাকার ছবি প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হলে ‘বাংলাদেশ যোগ’ বিষয়টি তাদের নজরে আসে। চুরি যাওয়া নোটের মধ্যে ছিল একটি সাদা ব্যাগ, যাতে কালো রঙে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আঁকা ছিল। গোয়েন্দারা আরও বুঝতে পেরেছিলেন যে টাকাগুলি ‘স্কচ টেপ’ দিয়ে শক্ত খামে প্যাক করা হয়েছিল, যা সাধারণত হাওয়ালা চোরাচালানের জন্য ব্যবহৃত হয়। আসলে প্রথম দিন থেকেই পার্থের বাংলাদেশ যোগে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশি গোয়েন্দারা। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কর্মসূচি মূলত দিল্লিতে হলেও একই সফরে তাকে কলকাতায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে কলকাতার একাধিক সংস্থা। তার পরপরই বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও দেখতে চান পার্থের এই কাণ্ডে বাংলাদেশ যোগ কতটা গভীরে আছে।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থের অর্থের একটা অংশ হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে গিয়েছে বহুবার। সেই অর্থের একটি অংশ দিয়ে বাংলাদেশে বেনামে জমি ও বাড়ি কেনা হয়েছে বলেও তথ্য পাচ্ছেন তারা। বাকিটা তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো হতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে এই কাজে কলকাতার দুই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। ইডির দাবি, পার্থের মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে এই দুই সংস্থা জড়িত। একটি তৈরি পোশাকের ব্যবসা, অন্যটি শিক্ষা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তৈরি পোশাক কোম্পানি দুই দেশেই ব্যবসা করে। এই কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের কাপড় আমদানি করে এবং দেশের বাজারে বিক্রি করে। শিক্ষা ব্যবসার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনিক্যাল কলেজ এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খুলতেও আগ্রহী। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং একজন প্রতিমন্ত্রী সে দেশে সংস্থাটির ‘স্বার্থ দেখেন’।
ইডি-সূত্রের মতে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে এই যোগাযোগ এবং কুমিল্লার লোক পার্থের ‘সম্ভাব্য অর্থ ও বিনিয়োগের প্রবাহ’ খতিয়ে দেখতে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শুক্রবার পর্যন্ত চিঠিটি তাদের কাছে পৌঁছায়নি। যদিও তারা ইতিমধ্যেই এই তদন্ত শুরু করেছে।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, পার্থের একজন বান্ধবী (অর্পিতা নয়) শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন নিয়মিত বাংলাদেশে আসতেন এবং সেখানকার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ তৈরি করেছিলেন, যা পরে সে দেশে অর্থ বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। বাংলাদেশে পার্থের জমি ও বাড়ি দেখাশোনা করতেন এই বান্ধবী বলেও দাবি করেছে ইডি। প্রাথমিক তদন্তে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ওই দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সঙ্গে ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠতা’ তৈরি করে এই বান্ধবী তাকে ব্যবহার করেছে। প্রবীণ এই শিক্ষানুরাগীর হাত ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছেন তিনি।
বাংলাদেশি গোয়েন্দারা আশা করছেন, চিঠির পাশাপাশি ভারতীয় তদন্তকারীরা কিছু সুনির্দিষ্ট ক্লুও দেবে, যা তাদের তদন্তে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্যে, এ দিকে বাংলাদেশের জড়িত এই তিন ব্যক্তির নাম এখনো প্রকাশ করেনি কৃর্তপক্ষ। আর এই কারনে আরো বেশি জল ঘোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এ নিয়ে পরবর্তি কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা জানানো হয়নি এখনো।
সূত্র:আনন্দবাজার পত্রিকা