বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এবং দামি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে শুধু টাকা হলেই যে পড়া যায় তা নয় লাগে এডমিশন পরীক্ষা ও। চান্স পাওয়ার পর দিতে হয় টিউশন ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা। তাই তো সবার পড়ার সুযোগটা সেখানে থাকে না। তবে এবার সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে অভিযোগ আসলো অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন রকম দুর্নীতির। তাইতো এবার ডাক পড়লো তাদের দুদকের।
অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য রেহেনা রহমান ও বেনজীর আহমেদকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৯ ডিসেম্বর সংস্থাটি এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে দুজনকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী, স্বজনদের চাকরি দেওয়ার নামে অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয় ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের আড়ালে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য রেহেনা রহমান ও বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। এতে উল্লেখ করা হয়, সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত অভিযোগ বিষয়ে তাদের বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা প্রয়োজন। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে বক্তব্য প্রদানের জন্য তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।
এর আগে একই অভিযোগে তলব করা হয় আরও দুই ট্রাস্টি এমএ কাসেম ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে। তবে রোববার তারা দুদকে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়েছেন। মোহাম্মদ শাজাহান অসুস্থতার কারণ দর্শান, অন্যদিকে এমএ কাসেম বার্ধক্যজনিত কারণে বিশ্রামে আছেন বলে আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছেন। কিন্তু বুধবার তিনি সাউথ ইস্ট ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। অংশ নিয়েছেন নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের সভায়ও।
অভিযুক্ত বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও এমএ কাসেমের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতসংশ্লিষ্টতা এবং জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাকা চৌধুরীর আপন খালাতো বোন রেহানা রহমান।
দুদকের ডাকে সাড়া না দেওয়াকে ধৃষ্টতা ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন বলে দাবি করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগকারী সংগঠন আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস। তিনি বলেন, ‘এমএ কাসেম ও মোহাম্মদ শাজাহান বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মিটিং, বিশ্ববিদ্যালয় মিটিংসহ সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু দুদকে উপস্থিতির ক্ষেত্রে অসুস্থতার দোহাই দিলেন। আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা আসলে সময়ক্ষেপণ করছেন। আমরা জানতে পেরেছি, একই প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত ট্রাস্টিরাও দুদকে উপস্থিত না হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। অন্যরা যাতে একই রকম অজুহাতে পার পেয়ে না যায়, সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই।’
জানা গেছে, অভিযুক্তরা দুদককে এড়িয়ে চলার জন্য আইনজীবীদের পরামর্শে বিভিন্ন ফাঁকফোকর খুঁজছেন। এদিকে একই অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই ট্রাস্টি আজিম উদ্দিন ও আজিজ আল কায়সার টিটোকে ৯ জানুয়ারি দুদকে তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সূত্র জানায়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত ট্রাস্টিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে যাওয়ার পর তাকে সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
এত বড় বিশ্ববিদ্যালয় এত বড় অরাজকতা এটা আসলেই ভাবা যায় না। তবে দুদকের হাতে পড়লে তার যে আর রক্ষা হবেনা এটা অনেকটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। দেশ থেকে বেরোনোর সব রাস্তায় দুদক বন্ধ করে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয় শেষ তদন্তে কি আসে, আসলেই কি তারা দোষী! আর যদি তারা দোষী হয় তাহলে তাদের কি সাজা মেলে।