Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Entertainment / অভি মাথায় পিস্তল তাক করে বলে, তোর সাহস আছে আমাকে দেখে নিবি : জবানবন্দিতে তিন্নির বাবা

অভি মাথায় পিস্তল তাক করে বলে, তোর সাহস আছে আমাকে দেখে নিবি : জবানবন্দিতে তিন্নির বাবা

বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সাড়া জাগানো অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি। মডেলিংয়ের মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে বড় পর্দায় পা রাখেন তিন্নি। আর এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোটি ভক্তের মন জয় করে নিতে সক্ষম হন গুণী এই অভিনেত্রী। তবে দুর্ভাগ্যবসত আবারও অল্প সময়ের মধ্যেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে হয় তাকে। তবে সাধারণ ভাবে নয়, বরং তার মৃত্যু হয় অস্বাভাবিক ভাবে। সেই ধারবাহিকতায় একটি হ’ত্যা মামলাও দায়ের করে এই অভিনেত্রীর পরিবার। আর এবার ঐ মামলায় সাক্ষ্য দিলেন নিহতের বাবা ও চাচা। সাক্ষীরা হলেন, তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম ও বড় চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম। গতকাল বুধবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে তারা সাক্ষ্য প্রদান করেন। এদিন মাহবুব করিমের সাক্ষ্য শেষ হলেও রেজাউল করিমের শেষ হয়নি। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

জবানবন্দিতে তিন্নির বাবা মাহবুব করিম বলেন, ‘তিন্নি আমাকে ২০০২ সালের ৫ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে টেলিফোনে বলে ধানমন্ডি যাওয়ার জন্য। আমি সেখানে যাই। তিন্নি আমাকে বাবু নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমাকে তিন্নি এটাও বলে যে, বাবু ভাই হচ্ছেন অভি। পরে আমি তিন্নিকে নিয়ে বাসায় চলে আসি। আসার সময় আমি তিন্নিকে জিজ্ঞেস করি, অভির সঙ্গে এই ঘোরাঘুরি কেন? তিন্নি বলে- অভির সঙ্গে তার অ্যাফেয়ার। অভি তাকে বিয়ে করবে।’

মাহবুব করিম আরও বলেন, ‘তখন আমি তিন্নিকে তার স্বামী পিয়ালের কথা বলি। তাকে বলি, তুমি কীভাবে অভিকে বিয়ে করবা। আমি এমন বিয়ে মানব না। তিন্নি বলে, আমি পিয়ালের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি; কিন্তু সে আমাকে ধরে রাখতে পারেনি। পরের দিন রাত ১০টায় অভি আমাকে তিন্নি-পিয়ালের বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে পিয়াল ছিল। অভি আমাকে বলে, পিয়ালের কাছ থেকে তিন্নির তালাক সে নিয়ে নেবে। তার পর অভি পিয়ালকে ধমকের সুরে বলে, সে ২টা ডিভোর্স লেটার ব্যাকডেটে পাঠাবে। সেগুলো পিয়াল ব্যাকডেট দিয়ে সিগনেচার করে নেবে। তার পর অভি বলে- রোজার ঈদের পরই সে তিন্নিকে বিয়ে করবে। অভি বলে মেয়ে আনুষ্কা পিয়ালের কাছে থাকবে।

একপর্যায়ে পিয়াল অভিকে বলে, অভি ভাই, আপনাকে নাকি তিন্নির বাবা দেখে নেবে। অভি সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে পিস্তল বের করে আমার মাথার ডান পাশে তাক করে বলে- ওই শালার বেটা, তোর সাহস আছে আমাকে দেখে নিবি? আমি তখন ভয়ে বলি, অভি ভাই আমি তো আপনারে চিনি না। তখন অভি বলে- এখন বুঝছোস তো আমি কে? এর পর অভি পিস্তল নামায়। পরে আমাকে চলে যেতে বললে আমি রাত ১২টার দিকে বাসায় চলে আসি। এদিন সম্ভবত ৬ নভেম্বর তারিখ ছিল।

মাহবুব করিম আরও বলেন, ‘এর পর ৭/৮ তারিখ আমি ও তিন্নি কেউ কারও বাসায় যায়নি। ১০ তারিখ সন্ধ্যার পর আনুমানিক ৭টা বা সাড়ে ৭টার সময় তিন্নি আমার বাসায় আসে। তিন্নি ৫-৭ মিনিট, বেশি হলে ১০ মিনিট ওই বাসায় ছিল। দাদাকে সে পা ধরে সালাম করে। বুকে জড়িয়ে আদর করে। আমাকে সরি বলে ওই দিনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। এর পর আমি তিন্নিকে থাকতে বলি। তিন্নি বলে অভি এসে নাকি ফাংশনে নিয়ে যাবে। তিন্নি বলে- তাকে যেতে হবে। তার পর তিন্নি চলে যায়।

তিনি বলেন, ‘৯টার সময় তিন্নির বাসার কাজের মেয়ে বীনা আমার বাসায় এসে জিজ্ঞেস করে তিন্নি আপু কোথায়? আমি বলি, ও তো চলে গেছে আরও আগে। বীনা বলে, অভি ভাই আইসা তিন্নিকে না পাইয়া রাগারাগি করতেছে। রাত ১০টা পর্যন্ত বীনা ২-৩ বার আসে তিন্নিকে খুঁজতে। আমরাও অস্থির হয়ে যাই। খুঁজতে শুরু করি। রাত ১১টার দিকে আব্বা বড় ভাইকে বলে- তোরা রাতে বাসায় থাকিস না, অভি এসে শাসিয়ে গেছে। আব্বা আমাদের কোথাও চলে যেতে বলে। ভাইয়া তখন আমাকে রামপুরার এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায়। পরের দিন আমাকে ওখানে রেখে ভাইয়া কলাবাগানের বাসায় চলে আসে। ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমি ওখানেই ছিলাম। ১৫ তারিখ সকাল ৯-১০টার সময় মামাতো ভাই পেপারে তিন্নির লাশের ছবি দেখে আমাকে দেখায়। আমি লাশ দেখে চিনতে পারি। তার পর আমরা কেরানীগঞ্জ থানায় যাই। আমি লাশ দেখতে চাই। তার পরদিন পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে জুরাইন কবরস্থান থেকে। পরে পত্রিকায় এবং মানুষের মুখে শুনতে পারি যে, অভিই তিন্নিকে হত্যা করেছে। এর পর তিনি বলেন, এ মামলার জবানবন্দি। ন্যায়বিচার চাই। এর পর আসামি পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী তাকে জেরা করেন। জেরা শেষ হওয়ার পর তিন্নির বড় চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম আদালতে জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন। আংশিক জবানবন্দি দেওয়ার পর তা অব্যাহত থাকাবস্থায় আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ঠিক করেন।

এর আগে গত ১৫ নভেম্বর এ মামলায় রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়। সেদিন তিন্নির বাবা ও চাচা আদালতে এসে মামলা রায়ের পর্যায়ে যাওয়ার বিষয় কিছু জানেন না এবং তারা সাক্ষ্য দিতে চান মর্মে জানান। তখন আদালত মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে ৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য করেন।

মামলার একমাত্র আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি। যিনি বিদেশে পলাতক রয়েছেন। মামলা থেকে জানা যায়, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি (২৪) খুন হন। বুড়িগঙ্গার চীন-মৈত্রী সেতুর নিচে তার লাশ পাওয়া যায়। একই বছরের ১১ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংসদ গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে তিন্নির স্বামী সাফকাত হোসেন পিয়ালসহ ৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়া অপর আসামিরা হলেন এবাইদুল্লাহ, গাজী শরিফ উদ্দিন, সফিকুল ইসলাম জুয়েল ও সোমনাথ সাহা।

তবে গুণী এই অভিনেত্রীকে হারানোর এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও, এখনও পর্যন্ত তার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তার অগুনিত ভক্ত-শুভাকাঙ্খিরা। সর্বদাই তাকে খুঁজে চলেছেন সকলেই। আর এখন তাদের একটাই চাওয়া যেন, এ মামলার সুষ্ঠু বিচার হয়।

About

Check Also

বিয়ের এক বছরের মাথায় মৌসুমী মুখে ডিভোর্স প্রসঙ্গ, যা জানা গেলো

‘লাক্স তারকা’র মাধ্যমে বিনোদন জগতে পা রাখা ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ সংসার এবং …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *