সম্প্রতি সহপাঠী ও প্রক্টরের হয়রানির কারণে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয় জাবি শিক্ষার্থী অবন্তিকা। তার এমন মৃত্যুতে আবার প্রমাণ করল ক্ষমতার কাছে আসলে নারীরা অসহায় যার কারণে অকালে চলে যেতে হয় অবন্তিকা নামের মেধাধী শিক্ষার্থীদের। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টরের সাক্ষাত্কার নিয়েছে একটি টেলিভিশন। মনোযোগ দিয়ে দেখলাম। ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি ভিক্টিম ব্লেমিং করলেন। তার বক্তব্য শুনলে মনে হবে যেন এই নিরীহ এবং শিক্ষার্থী-বান্ধব ব্যক্তিটিকে বিপদে ফেলবার জন্যই অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছে! তিনি এমন কি অন্য অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষেও সফট পজিশন নিলেন। দাবি করলেন, অন্য অভিযুক্ত আম্মানের সাথে তার কখনোই এসব বিষয়ে কোনো কথা হয় নি। প্রমাণ হিসেবে তিনি তদন্তকারীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে বললেন।
এসব বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তদন্ত কমিটি দুই বছরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয় বছরে কী বের করবে সেটা তাদের বিষয়। গ্রহণযোগ্য কমিটি করতে হবে। কমিটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। অবন্তিকার বন্ধুরা আলটিমেটাম দিয়েছে। তিনি কতখানি দোষী সেটা নিশ্চয়ই তদন্তে বের হবে।
আপাতত তার বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় খোলাসা হল। এক, অবন্তিকার বাবা এবং মা তার সাথে দেখা করেছেন এবং অবন্তিকার বিরূদ্ধে তার বন্ধুদের করা জিডি তুলে নিতে বলেছেন। তার দাবি, ঘটনা মিটমাটের পরে এবং প্রক্টরের অনুরোধের পরেও সেই জিডি তারা তোলে নি। কেন তোলে নি? প্রক্টর বেশ খোশ মেজাজে বলেছেন, তারা আইনের ছাত্র। আইন ভাল বোঝে।
এর অর্থ কি??
প্রক্টরিয়াল অফিস যদি অবন্তিকা ও তার বন্ধুদের মধ্যে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা সত্যিসত্যিই মিটমাট করে থাকে, তবে তার বিরূদ্ধে করা জিডি তুলে নেয়ার জন্য তাদেরই উদ্যোগ নেয়া উচিত। ঘটনা মিটমাট হয়ে থাকলে জিডি থাকার কথা নয়। আর মিটমাট হয়ে না থাকলে প্রক্টরের দায়িত্ব শেষ হয় না। অবন্তিকার মা বাবা যখন তাকে জিডি তোলার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানান, তখন তিনি তাদের বলেন প্রধান প্রক্টরের সাথে কথা বলতে। এবং তাকে “বিরক্ত” না করতে। তিনি সহকারী প্রক্টর, তার কাজ প্রক্টরের হুকুম তামিল করা!
জানি না জগন্নাথ নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরিয়াল রূলস আলাদা কিনা। কোনো অভিভাবক যদি সহকারী প্রক্টরের কাছে কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেন, তবে সেই সহকারী প্রক্টর কি নিজে সেটা তার অফিস প্রধানের কাছে নিয়ে যাওয়ার এখতিয়ার রাখেন না? অথবা সেই অভিভাবককে প্রক্টর মহাশয়ের দরবারে নিয়ে যাওয়ার এজাজত তার নাই? কেন একজন অসুস্থ পিতাকে তার সন্তানের জন্য প্রক্টরের বিভিন্ন লেয়ারে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে? ফোন করায় তিনি অবন্তিকার অভিভাবককে জানিয়েছেন, যাতে তাকে তারা এ বিষয়ে “বিরক্ত” না করেন!
এটুকু তারই মুখের ভাষ্য। অর্থাত্ মিডিয়ার কাছে তিনি যতখানি পরিশীলিতভাবে ঘটনাটি বলেছেন, সেখান থেকেই পাওয়া।
সবচে মারাত্মক যে আলাপটি এই সহকারী প্রক্টর মহাশয় করেছেন সেটা হল, অবন্তিকা মানসিক অবসাদের রোগী, এবং তার বাবাও তাই। এ কথা নাকি অবন্তিকার মা-ই তাকে বলেছে। অর্থাত্, অবন্তিকা নিজের মানসিক সমস্যার জন্য আত্মহত্যা করেছে, এবং এটি তার বাবারও ছিল!
এটাকেই বলে ভিক্টিম ব্লেমিং।
সহকারী প্রক্টর মহাশয়ের দোষগুণ বোঝার জন্য দুই বছরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখার চেয়ে এরকম আর দুয়েকটা ইন্টারভিউ দেখলেই চলবে মনে হয়।