অনেকে জীবন সংগ্রামের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। তবে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া আব্দুর রহিম মাসুদ নামক এই ব্যক্তির ঘটনা একদমই ভিন্ন। পরিবারের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে নিজেকে দেশান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় এই যুবক। তবে পরিবারের প্রতি অভিমান কেড়ে নিল তার জীবন। যে ঘটনায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, বাড়ি ছেড়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আব্দুর রহিম মাসুদ (১৮) নামে এক যুবক। সেখানে তিনি শ্রমিক হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
আব্দুর রহিম দিয়ার উপজেলার মানিকচক কামারপাড়া এলাকার বাবলু রহমানের ছেলে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সীমান্ত থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বজনরা লাশটি মাসুদের বলে নিশ্চিত করেন।
এদিকে সীমান্তে বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে নি//র্যাতন করে হ//ত্যার কোনো তথ্য নেই বিজিবির কাছে। ফলে শুক্রবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে ধরতে পারেনি বিজিবি।
পতাকা বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী-১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, সীমান্তে বিএসএফের নি//র্যাতনে বাংলাদেশিদের মৃ/ত্যু হয়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমাদের জানামতে, ১৮ সেপ্টেম্বর নৌকাডুবিতে একজন বাংলাদেশি নিখোঁজ হয়েছেন। আমরা বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজ খবর নিচ্ছি। সীমান্ত পার হতে পারে এমন বিষয় মাথায় রেখে আমরা বেশ কয়েকবার বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করেছি। পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ভারতীয় সীমান্তের প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুদের বাবা বিষয়টি জানতে পেরে বিজিবিকে জানান। এরপর শুক্রবার বিকেলে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পতাকা বৈঠক করে।
বিএসএফ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া দেহটি সম্পূর্ণ পচে গেছে। লাশ শনাক্ত করার কিছু নেই। দেশটির পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
বিজিবি অধিনায়ক জানান, যে এলাকায় লাশটি পাওয়া গেছে সেটি পদ্মার উজানে। লাশ সেখানে যাওয়ার কথা নয়। তাছাড়া এত তাড়াতাড়ি লাশ পচে যাওয়ার কথা নয়। সব মিলিয়ে মৃতদেহটি অন্য কারো বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাসুদ নিখোঁজ রয়েছে এবং তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
তবে চর আশারিয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, লাশটি নিখোঁজ মাসুদের। তিনি জানান, ভারতের রানীতলা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তারা ভারতীয় স্বজনদের থানায় পাঠায়। পরে তিনি নিজেই ওসির সঙ্গে কথা বলেন। ওসি মৃতদেহের ছবি পাঠান এবং হোয়াটসঅ্যাপে আলামত উদ্ধার করেন। মাসুদের পরনে লুঙ্গি-গেঞ্জি দেখে তার স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন। বিএসএফ প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, মাসুদ মাজারদিয়ায় বিজিবি ক্যাম্পের সামনে থেকে অপর তিন যুবকের সঙ্গে সীমান্ত পার হচ্ছিলেন। এ সময় বিএসএফের হারুডাঙ্গা ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়। আরও তিনজন ইতিমধ্যেই সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
তারা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু মাসুদ বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে। পরে তাকে নি/ র্যাতন করে হ/ত্যা করে লাশ ফেলে যায় বিএসএফ। তার সঙ্গে যে চার যুবক গিয়েছিল তারা বাইরের এলাকার বাসিন্দা। পরে তাদেরও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
চেয়ারম্যান দাবি করেন, নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ যুবকের বিষয়টি তিনিই প্রথম বিজিবির সেক্টর কমান্ডারকে জানান। তারপর এই খবর যায় ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে। এ সময় প্রমাণের অভাবে তারা বিষয়টি নিয়ে জোর দিতে পারেননি।
এদিকে মাসুদের বাবা মো. বাবলু গণমাধ্যমকে জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে মাসুদ বাড়ি থেকে বের হয়। পরে সে জানতে পারে ওই দিন বিকেলে বিজিবির হারুডাঙ্গা ক্যাম্প দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে ভারত সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল।
বিএসএফের ধাওয়ায় মাসুদ ধরা পড়লে বাকিরা পালিয়ে যায়। তাকে নি/ র্যাতন করে হ/ ত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয় সীমান্ত এলাকায়। ছেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বাবা।
মাসুদের প্রয়ানের খবর শুনে ঘটনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চায়ে স্বজনরা বিজিবির সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে ঘটনা একটু ঘাটাঘাটি করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জানা যায় যে লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে সেই লাস্টে মাসুদের নাও হতে পারে এ বিষয় নিয়ে এখনো পর্যন্ত চিন্তিত রয়েছে কর্তব্যরত অফিসারেরা। অনেকে ধারণা করছে বিজেপি নি//র্যাতনে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মাসুদের। তবে এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত নয় কেউ। ওই লাশটি মাসুদের কিনা তা পরিবার নিশ্চিত করলেই তাদের ছেলেকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।