রাজধানীর উত্তরায় নিজের বাসায় আত্মহননের ঘটনায় অভিনেত্রী হুমাইরা নুসরাত হিমুর ‘বয়ফ্রেন্ড’ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকে (উরফি) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। জিয়াউদ্দিন রুফি ওরফে উরফি জিয়া নামেও পরিচিত।
র্যাব জানায়, হিমু এর আগে ৩/৪ বার উরফিকে বলেছিল সে আত্মহনন করবে। কিন্তু তিনি তা করেননি। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। হিমু তখনও বলেছিল সে আত্মহনন করবে। উরফি এবারও পাত্তা দেয়নি। এরপর হিমু আত্মহনন করে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, এ ঘটনায় হিমুর খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় উরফিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মইন জানায়, জিয়াউদ্দিন ২০১৪ সালে হিমুর চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যার কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক সম্পর্কের মাধ্যমে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। তিনি জানান, হিমুর সঙ্গে তার চাচাতো ভাইয়ের সম্পর্ক ভেঙে গেলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিন নিয়মিত যোগাযোগে ছিলেন।
তিনি জানান, জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। গত চার মাস আগে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে জিয়াউদ্দিন হিমুকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া শুরু করে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও তর্ক-বিতর্ক হতো। জিয়াউদ্দিন আরও জানান, গত ২/৩ বছর ধরে হিমু ‘বিগো লাইভ’ অ্যাপে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ নষ্ট করে। এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় তর্ক-বিতর্ক হয়।
জিয়াউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিকটিম হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করে। হিমু বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢুকে। রুমের সিলিং ফ্যানে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানায়।
তবে জিয়াউদ্দিন র্যাবকে জানান, হিমু আগে ৩/৪ বার আত্মহনন করবে বলে জানালেও পরে তিনি আত্মহনন করেনি। এবারও আগের মতো আত্মহননের কথা বলা হলে তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে দেখতে পারে হিমু সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তখন সে হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এসময় সে পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে। পরে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায়।
পরে জিয়াউদ্দিন, বাড়ির দারোয়ান ও মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃ”ত ঘোষণা করেন।
র্যাব জানায়, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের প্রাক্তন স্বামীও ছিলেন। ঘটনার দিন চিকিৎসক হিমুকে মৃ’ত ঘোষণা করার পর হিমুর ২টি আইফোন ও গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরে হিমুর গাড়িটি উত্তরার বাড়ির পার্কিংয়ে রেখে যায়। এরপর মোবাইল ফোন ২টি বিক্রির উদ্দেশে রাজধানীর বাংশাল এলাকায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী জিয়াউদ্দিনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।