Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশংসিত হচ্ছেন ইউএনও

অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশংসিত হচ্ছেন ইউএনও

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে টিসিবি কার্ড বিতরণে অনিয়ম এক সময় চোখে পড়ার মতো ছিল। একই সঙ্গে বিএডিসির সেচ লাইন নিয়ে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ ছিল। জাল লাইন সরবরাহ, ফটোকপিতে তৎকালীন ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে লাইসেন্স দেওয়া, টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স পাওয়াসহ অনেক ঝামেলা ছিল এই স্পষ্ট লাইসেন্স নিয়ে।

পাংশা উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী যোগদানের পর থেকে এসব বিষয় তার নজরে আসে এবং তিনি নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এতে তিনি লাভবানও হন। কোনো টাকা লেনদেন ছাড়াই প্রকৃত ব্যক্তি লাইসেন্স পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা আনন্দিত। এই বিএডিসি সেচ অফিস এলাকায় আগে দালালদের দৌড়াদৌড়ি, লক্ষ্য করুন এখন সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না।

কসবামজাইল ইউনিয়নের বড়খোলা গ্রামের কৃষক সালাম হোসেন বলেন- এখন লাইন নিতে ঘুরতে হবে না, উপজেলা সভায় আবেদন করেছি, বাড়তি কোনো টাকা দিতে হয়নি। হাসাবপুর ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের এক ব্যক্তি গত ২ বছর ধরে লাইসেন্স নিয়ে সেচ প্রকল্প পরিচালনা করে নবায়ন করতে গিয়ে জাল লাইসেন্স নিয়ে ধরা পড়েন। এমন বিড়ম্বনার দিন শেষ।

এদিকে ইউএনও মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী টিসিবি কার্ডের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীদের হাতে কার্ড তুলে দিচ্ছেন। তখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সব কার্ড বিতরণ করা হলেও এখন ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে সঠিক মানুষের কাছে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই। প্রতীক কার্ডধারীরা নিজেরাই এই কার্ড পেয়ে খুশি।

ইউএনও জাফর সাদিক চৌধুরী বছরের পর বছর ধরে যাদের নামে কার্ড ছিল এবং তাদের নামে কার্ড আছে তা জানত না এবং তারা কখনই সুবিধা নিতে পারেনি তাদের সন্ধান করে কার্ড হস্তান্তর করেন।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন- পাংশা উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকে সরকারি সেবা ও বিভিন্ন কর্মসূচির সুফল প্রকৃত মানুষের কাছে পৌঁছাতে আমি যে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি তার মধ্যে যে উদ্যোগটি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো। প্রকৃত কার্ডধারীদের জন্য TCB এর কার্ড। ব্যক্তির কাছে পৌঁছান।

আমি যোগদানের পর থেকে বিষয়টি বিভিন্নভাবে আমার নজরে এসেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগও পেয়েছি। এরপর আমরা টিসিবির সুবিধাভোগীদের তালিকা হালনাগাদ করে নতুন রঙ দিয়ে কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিই।

পূর্বে কার্ডের রঙ ছিল আকাশী নীল, তা বাতিল করে গোলাপী রঙের কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল এবং প্রকৃত ব্যক্তির কাছে কার্ড বিতরণের জন্য প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছিল এবং নতুন কার্ড হস্তান্তর না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আসল ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও কাছে রঙিন কার্ড। ভাই, ছেলে, বাবা, মা, বোন, মেয়ে বা অন্য কোনো পরিচয়ে যিনি আসবেন তাকে কার্ড দেওয়া উচিত নয়। আমার ট্যাগ অফিসাররা প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ৩ থেকে ৫ দিন সময় কাটান এবং সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইউনিয়নে বসে প্রকৃত ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করেন এবং তাদের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেওয়ার পর কার্ড বিতরণ করেন।

এতে দেখা যায়, কার্ডধারীদের একটি বড় অংশের কাছে কার্ড বিতরণ করা সম্ভব নয়। কারণ যাদের নামে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে তারা আসলে জানেন না যে তাদের নামে আগের টিসিবি কার্ড আছে। এরপর যেসব কার্ড বিতরণ করা হয়নি সেগুলো ট্যাগ অফিসাররা আমার অফিসে ফেরত দেয়। এখন প্রতি সপ্তাহে বাকি প্রকৃত কার্ডধারীদের খুঁজে বের করে খবর দিয়ে তলব করা হয়, যার নামে টিসিবি কার্ড শুধু তার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

এই ব্যক্তিদের বেশিরভাগই প্রকাশ করেছেন যে তারা জানেন না যে তাদের নামে কার্ড রয়েছে এবং এমনকি তাদের নামে টিসিবি কার্ড রয়েছে তাও কখনও জানানো হয়নি। এই কার্ড পাওয়ার পর এই মানুষগুলোর মুখে যে হাসি ও আনন্দ দেখি তা আমাকে শান্তি দেয়। সেই শান্তি অন্য কিছুর সাথে অতুলনীয়। এই হাসি সামনের দিনগুলোতে আমার কাজে আরও অনুপ্রেরণা যোগাবে, আমি নিশ্চিত।

About Zahid Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *