মানষ অল্প সময়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেবার জন্য প্রতারণার আশ্রয় গ্রহন করছে। এই ধরণের কর্মকান্ড ঘটানোর পূর্বে অপরাধকারীদের বুক একটুও কাঁপে না। পরবর্তী ফলাফল যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেই বিষয়ে তারা ততটা ভাবেনা। প্রতারণা করাটা অনেকটা মানুসের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি জানা গেছে নোঙর করা জাহাজ নিজের বলে হাতিয়েছেন শত কোটি টাকা, অবশেষে ধরা পড়লো র্যাবের হাতে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজ চুরি করে নিজের বলে দাবি করেছেন মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪২) নামে এক ব্যক্তি। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কাটিয়াহাট এলাকার সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে। ২০১৪-১৫ সালে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ওই টাকা হাতিয়ে নেন।
তার কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করতে না পেরে ভুক্তভোগীরা মামলা করেন। এর মধ্যে ১১টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। মামলার রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ এলাকার মসিউর রহমানের ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
সোমবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক এ তথ্য জানান। কর্নেল এম এ ইউসুফ। তিনি বলেন, নোঙর করে বিদেশি জাহাজ কিনেছেন, অন্যের জমি দাবি করে অগ্রিম বিক্রি করেছেন, আবার কখনো নিজেকে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি দাবি করেও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
র্যাব-৭ এর বহদ্দারহাট চান্দগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী আট ভাই ও তিন বোন। ১৯৯৮ সালে বাবার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে শিপ স্ক্র্যাপের ব্যবসা শুরু করেন। অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করে এ ব্যবসায় লাভ দেখে টাকার বিনিময়ে আরও কয়েকজনকে অংশীদার হিসেবে নেন। এভাবে চলতে থাকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত। তারপর ব্যবসায় লোকসানের কারণে অনেকেই ঋণে পড়ে যান। অল্প সময়ে বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্ন। ২০১৪-১৫ সালে, তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে একটি জাহাজের নিজস্ব হিসাবে বিজ্ঞাপন দেন এবং বিভিন্ন লোকের সাথে অংশীদার হন। এই জাহাজটি স্ক্র্যাপিং করে বিক্রি করার পর টাকাসহ মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। কেউ ৫০ লাখ টাকা, কেউ এক কোটি টাকা আবার কেউ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত দেন। ওই গ্রুপের মাধ্যমে তিনি টাকা পান।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জাহাজটি কাটা হয়নি, তাই পাওনাদারদের দাবি। পাওনাদারদের নতুন গল্প শোনালেন মেজবাহ। বলেন, তিনি যে জাহাজটি কিনেছেন তাতে একটি কন্টেইনার ছিল। যেখানে তিনি প্রচুর সোনা পেয়েছেন। যার বাজার মূল্য ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এসব সোনা বিক্রির পর বাংলাদেশ ব্যাংক এ টাকা জব্দ করেছে। ছাড় পেলে মুনাফাসহ সব টাকা পরিশোধ করবেন। এ কথা বলে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বেশি টাকা নেন। মেজবাহ আরও ঘোষণা করেছেন যে তিনি যে জাহাজটি কিনেছিলেন তাতে সোনার পাশাপাশি পাঁচটি হীরা ছিল। যার প্রতিটির বাজার মূল্য দুই হাজার কোটি টাকা। এর বেশির ভাগই রাজ্যে যাবে, কিন্তু সে অংশ পাবে। তারা এসব কথা বলে সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা চুরি করে। তবে ২০১৫ সালের দিকে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। মূলত তখন থেকেই তার প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা মামলা করা শুরু করে। তারপর আত্মগোপনে চলে যায়।
তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতারের খবর শুনে বেশ কয়েকজন পাওনাদার র্যাব অফিসে ভিড় করেন। এর মধ্যে আব্দুল হাকিম নামে এক ব্যক্তির থেকে দুই কোটি ২০ লাখ, আজগর আলীর থেকে ৭০ লাখ, রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ, ইব্রাহীমের থেকে ২০ লাখ, রুমনের থেকে ৬৩ লাখ, শহিদুল ইসলামের থেকে ৯০ লাখ, জাহিদুল ইসলামের থেকে ৫০ লাখ, আসাদের থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ ও শাহজাহানের কাছ থেকে দুই কোটি টাকাসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, র্যাব হলো বাংলাদেশের অন্যতম একটি অপরাধ দমন কারী অনেক সাহসী ও পারদর্শী একটি বাহিনী। অপরাধকারী যেই হোক যতই চালাক হোক না কেনো র্যাবের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারে না। এক সময় না এক সময় তাকে ধরা পরতে্ই হয়। আর ঠিক তেমনটি ঘটেছে এই ব্যক্তির সাথে। তিনি মনে করেছিলেন তার এই অপরাধ কেউ কখনো বুজতে পারবে না। কিন্টু অচিরেই হলো গ্রেফতার।