ভোটাররা তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) নেতা লাই চিং-তেকে নতুন নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নবনির্বাচিত লাই বলেছেন যে, তিনি চীন থেকে তাইওয়ানকে সুরক্ষিত রাখতে বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে লাই আও বলেন, তিনি চীনের সঙ্গে সংঘাতের পরিবর্তে সংলাপ ব্যবহার করবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন তাইওয়ানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই এ-ও একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে চীন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে একটি রাজনৈতিক প্রতিনিধিদল পাঠায়।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) নির্বাচনের ফলাফলের পর যুক্তরাষ্ট্রকে “গুরুতর ভুল সংকেত” পাঠানোর অভিযোগ করেছে চীন। দেশটি আরও বলেছে যে, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের সাথে শুধুমাত্র অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বেইজিং এই বার্তাটিকে তাইওয়ানের সাথে শুধুমাত্র অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখার ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘তাইওয়ানে নির্বাচিত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাইওয়ানের সঙ্গে শুধু সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখবে, কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্কে জড়াবে না।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথম চূড়ান্ত সীমারেখা বা রেড লাইন হলো তাইওয়ান।’ এ কারণে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক অভিযোগে জানিয়েছে, তাইওয়ানের সঙ্গে যেকোনো আনুষ্ঠানিকতাকে চীন কঠোরভাবে বিরোধিতা করে।
একই সঙ্গে তাইওয়ানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেকোনো প্রেক্ষিতে হস্তক্ষেপকেও বিরোধিতা হিসেবে দেখে।
চীন তাইওয়ানকে তার ভূখণ্ড বলে মনে করে। তারা বলেছেন, কোনো সরকার এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করলে বেইজিং কঠোর জবাব দেবে। নির্বাচনের পর, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাইওয়ানের নতুন নেতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে। তাদের মধ্যে, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাইপেই এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে অংশীদারিত্বের উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, এই সম্পর্ক হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে। এক বিবৃতিতে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ভাগ করা স্বার্থ ও মূল্যবোধকে এগিয়ে নিতে লাই এবং তাইওয়ানের সকল দলের নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’ ব্লিংকেন আরো জোর দিয়ে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের অন্যতম বৃহত্তম মিত্র। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এই শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন, “এই ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক-চীন নীতির অধীনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পরিবর্তে চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয়। তাইওয়ান, যাকে চীন একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসাবে দেখে এবং আশা করে একদিন মূল ভূখণ্ডের সাথে একত্রিত হবে।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মন্তব্য বেইজিং থেকে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাইওয়ানের কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে এমন কোনো বিবৃতিকে চীন অনুকূলভাবে দেখছে না। কারণ তাইওয়ানের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাইওয়ানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলো। খবর বিবিসির।