দেশের জাতীয়করণকৃত ৩২১টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী যারা রয়েছেন তারা গেজেট প্রকাশ বা অস্থায়ী নিয়োগের পূর্বে যদি অবসরে যান সেক্ষেত্রেও সরকারের তরফ থেকে যেসকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তার সবই পাবেন। যারা ৮ আগস্ট, ২০১৮ তারিখ হতে যারা অবসর নিয়েছেন তারাও এই সুবিধার আওতায় থাকবেন।
গেল ২৩ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় সভায় এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে জাতীয়করণকৃত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল সেটা অনেকটাই থাকবে না বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত ৩০৩টি কলেজের মধ্যে বেশিরভাগই ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা কমিটির কয়েকজন নেতা ‘নো বিসিএস, নো ক্যাডার’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারা এর প্রেক্ষিতে মামলাও করেছে। মামলার বাধা অতিক্রম করে ৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে কলেজটির সরকারিকরন গেজেট প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি আরও ১৮টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য গেজেট করা হয়। কিন্তু সরকারি খাতে এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি খাতে নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারি চাকরিতে কোনো কলেজ শিক্ষকের চাকরি পাওয়া সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, এরই মধ্যে জাতীয় করা এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর অনেকে অবসরে যাচ্ছেন। গত তিন বছরে ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে তিন হাজারের বেশি অবসরে গেছেন। যদি তাঁদের চাকরি সরকারি খাতে নিতে আরো কয়েক বছর সময় লেগে যায়, তাহলে অর্ধেক শিক্ষক-কর্মচারীই অবসরে চলে যাবেন। এ অবস্থায় সরকারি কলেজে চাকরি করেও তাঁদের বেসরকারি হিসেবেই অবসরে যেতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই সমস্যা সমাধানে কলেজ সরকারীকরণের গেজেট প্রকাশের পর কোনো শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেলে তাঁদের সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়। তবে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হওয়ার সুযোগ নেই বলে গত ২৩ নভেম্বরের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন একটি গনমাধ্যমকে বলেন, ‘জাতীয় করা কলেজের কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারীকরণের গেজেট যখনই জারি হোক, তাঁদের কলেজ সরকারীকরণের গেজেট যেদিন হয়েছে সেদিন থেকেই তাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় একমত হয়েছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মু. ফজলুর রহমান ঐ গনমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৮ সালের আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীরা সব সরকারি সুবিধা পাবেন। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারি খাতে নেওয়ার গেজেট যখনই জারি হোক না কেন, তা ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এরপর যে কেউ অবসরে গেলেও আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ীই তাঁর আগের সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনায় ভূতাপেক্ষ চাকরি স্থায়ী ও চাকরি সরকারীকরণের সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি হিসেবে একজন শিক্ষক যত দিন চাকরি করেছেন, তার অর্ধেক সময় বিবেচনায় এনে তাঁকে সরকারি সুবিধা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, এমপিওভুক্ত হিসেবে চাকরি থেকে অবসরের পর একজন শিক্ষক যদি ৩০ লাখ টাকার অবসর সুবিধা পান, তিনি সরকারীকরণের সুবিধা পেলে কমপক্ষে ৬০ লাখ টাকা পাবেন। এ ছাড়া মাসিক পেনশন সুবিধাও পাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৪২টি কলেজের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিকট পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪০টির মতো ফাইল যাচাই-বাছাই করার পর এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করছে। প্রশাসনিক পদের জন্য সচিব কমিটির ২০টি ফাইল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে।
সূত্র মোতাবেক জানা গিয়েছে, একটি কলেজের ৩৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে যদি কোনো কারনে একজনের কাগজপত্র সংক্রান্ত কোনো জটিলতা খুজে পায় তাহলে অন্য যারা রয়েছেন তাদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। আবার যদি সচিব কমিটি যদি একটি কলেজের পূর্ণাঙ্গ ফাইল না পায় তাহলে সেটা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকারি খাতে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া ঝুলে যাচ্ছে।