সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হঠাৎ একদিন পরিচয় হয় জাকিরের সাথে আরজুর। ধীরে ধীরে তারা বন্ধুত্বে পরিণত হয় একপর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করার এবং বিয়েও করে। তবে পারিবারিক কলহের জেরে বিবাহিত সম্পর্ক বেশি দিন টেকে না তাদের। একপর্যায়ে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তবে কিছু দিন না যেতেই তারা আবারও একসঙ্গে থাকতে শুরু করে তবে সেটা ছিল অবৈধ কারণ তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে এবং পরবর্তী বিয়ে না করেই একসঙ্গে বসবাস শুরু করে তারা।
জাকির হোসেন বাচ্চু (৩৮) পরিচয় জ্বীনের রাজা । জাকিরের সঙ্গে আরজু আক্তার (২৩)- সাথে প্রতারণার জন্য ফোন দিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিচয় হয় । তারা ফোনে প্রেমে পড়ে এবং অবশেষে বিয়ে করে। বিয়ের পর জাকির আরজু আক্তারকে জ্বীন প্রতারণার কাজেও জড়িয়ে ফেলে।
আরজু আক্তারের সাথে বসবাস করলেও পরকিয়ায় আসক্ত জাকিকে প্রতারণা করে উপার্জিত অর্থ অনৈতিক কাজে ব্যয় করতেন। এর জেরে একপর্যায়ে আরজুকে তালাক দেন জাকির।
বিবাহবিচ্ছেদ হলেও তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক ছিল, প্রায়ই একসঙ্গে থাকতেন। তবে জাকিরের একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন আরজু আক্তার। সে অনুযায়ী লঞ্চে করে ভোলা যাওয়ার পথে কেবিনে ঘুমের ওষুধ খেয়ে জাকিরকে হ/ ত্যা করে আরজু।
গত ২৯ জুলাই সদরঘাট এলাকায় এমভি গ্রীন লাইন-৩ লঞ্চের স্টাফ কেবিন থেকে জাকির হোসেন বাচ্চুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত ৩১ জুলাই নি/ হত জাকিরের প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হ/ ত্যা মামলা করেন।
সোমবার (১ আগস্ট) মামলার তদন্তভার নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভোরে সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে ঢাকাগামী একটি বাস থেকে আরজু আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন আরজু আক্তারকে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় হ/ ত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বুধবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জ্বীনের রাজা জাকির হোসেন বাচ্চুর বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। সেখানে তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তান থাকতেন। দুই বছর আগে জ্বীনের বাদশা পরিচয় দিয়ে প্রতারিত জাকির একদিন আরজু আক্তারকে ফোন করে। জিনের বাদশার দেওয়া ওই ফোনে প্রেমকে বিয়ে করার পর জাকির ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করে।
বিয়ের পর আরজু জানতে পারে সে জাকিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। তবে জাকিরের একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জের ধরে দুই মাস আগে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ডিভোর্স হয়ে গেলেও তারা একে অপরের বাড়িতে যেতেন। ডিভোর্স এবং একাধিক সম্পর্ক থাকার কারণে আরজু প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এদিকে আরজু আক্তার জানতে পারেন, ২৯শে জুলাই জাকির লঞ্চে ভোলা গ্রামে যাবেন। আরজুর বাড়ি জাকিরের বাড়ির পাশের গ্রামে হওয়ায় আরজু একটি কেবিন ভাড়া করে তাকে নিয়ে যেতে বলে। ওই দিন সকালে দুজনে এমভি গ্রীন লাইন লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া করে ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা হন। লঞ্চে ওঠার আগে আরজু একটা ঘুমের বড়ি আর এক বোতল দুধ কিনল।
পিবিআই এসপি জানান, প্রথমে লঞ্চের কেবিনে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। জাকি লঞ্চের নিচতলায় পানি আনতে যাওয়ার পর আরজু দুধের বোতলে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর জাকির কেবিনে এসে ওষুধ মেশানো দুধ পান করতে বলেন। জাকির দুধ পান করে ঘুমিয়ে পড়ে, তারপর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে। এরপর অন্য ওড়না দিয়ে জাকিরকে শ্বা/ সরোধ করে হ/ ত্যা করে মৃ/ ত্যু নিশ্চিত করার জন্য বটি দিয়ে আঘাত করে।
হ/ ত্যার পর আরজু জাকিরকে কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে ঘর ভালো করে গুছিয়ে রাখে। লঞ্চটি ভোলার ইলশা ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর আরজু নেমে পড়ে। লঞ্চের ক্লিনার কেবিনে এসে রুম পরিষ্কার করে দেখে আবার ঢুকেনি। বিকেলে লঞ্চটি আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে তিন শিশুকে নিয়ে ওই কেবিনে ওঠেন দুই নারী।
একটি শিশু খাটের নিচে চলে যায় এবং এক মহিলা যাত্রী জাকিরের লাশ আনতে গিয়ে লঞ্চের কর্মীদের খবর দেয়। পরে কর্মীরা এসে লাশ দেখে ঢাকা নৌ পুলিশকে খবর দেয়। লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছালে নৌ-পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পিবিআই কর্মকর্তা জানান, মামলার পর পিবিআই ঢাকা জেলা তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তদন্তে আরজু আক্তারকে শনাক্ত করা হয়। আরজু ভোলা থেকে স্পিডবোটে বরিশাল যান। সেখান থেকে দৌলদিয়া হয়ে ঢাকায় ফেরার পথে নবীনগর এলাকায় ঢাকাগামী বাস থেকে আরজু আক্তারকে আটক করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কোনো যাত্রী লঞ্চের কেবিনে উঠলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র রাখার কথা থাকলেও জাকির ও আরজুর কোনো পরিচয়পত্র রাখেনি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তারা যে কেবিন ভাড়া নিয়েছিল সেটি ছিল স্টাফ কেবিন। এগুলো স্টাফ কেবিন হলেও লঞ্চের কর্মচারীরা ভাড়া দেন।
অচেনা অজানা ব্যক্তির সাথে সামাজিক যোগাযোগের প্রেম করে অনেকে প্রতারিত হয়েছে। তারই এক বাস্তব প্রমান রাকিব এবং আরজুর এই ঘটনা। যদিও তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন বসবাস করেছে তবে তাদের পূর্বের ইতিহাস চলাচল কলাকৌশল কোন কিছু সম্পর্কে তারা অবগত ছিল না । যার জন্য তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তবে স্বার্থসিদ্ধির জন্য ফের তারা একত্রিত বসবাস শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ঘটে যায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিবাহ বা অন্য কোন সম্পর্কে জড়ানোর আগে একে অপরের সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত হয়ে কোন প্রকার সিদ্ধান্তের যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এলাকাবাসী ।