সম্প্রতি রেলের এক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে ঠিক কি ঘটেছিল তার এই মর্মান্তিক বর্ননা দিয়েছেন দুর্ঘটনার সাথে জরিত ট্রেনের চালক। উক্ত ট্রেনের চালকের নাম জহিরুল হক। ঘটনাদিন ঘটনাস্থলে কোন গেইটম্যান ছিলো বলে মনে হয়, যডি থাকতো তাহলে অবশ্যই মাইক্রোটাকে বাধা দিত এমনটাই জানিয়েছেন ট্রেন চালক জহিরুল।
মহানগর প্রভাতী ট্রেনের চালক (লোকোমাস্টার) জহিরুল হক খান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ১১ জন প্রয়াত হওয়ার একটি ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মাইক্রোবাসটি খুব দ্রুত রেললাইন পার হচ্ছিল, ট্রেনের গতিও ছিল প্রবল। ফলে তিনি বুঝতে পারলেন যে একটি সংঘর্ষ হবে, কিন্তু সেই মুহূর্তে কিছু করার নেই। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গাড়িটি এত কাছে আসছিল যে ট্রেন থামানো যাচ্ছিল না। সাধারণত, একটি ট্রেন থামাতে ৪০০ গজ পর্যন্ত দূরত্ব প্রয়োজন। যাইহোক, আমি সাথে সাথে ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তার আগেই মাইক্রোবাসটি ইঞ্জিনে উঠে যায়। তারপর, অবশ্য, সবকিছু শেষ। জহিরুল খান বলেন, লেভেল ক্রসিং-এর আগে গাছের জন্য বার (বাধা) ছিল কি না তা দেখা হয়নি। তবে গেটম্যান থাকলে বার পড়ে যেত, তাহলে মাইক্রোবাস ঢুকতে পারত না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ঘটনার সময় দারোয়ান সাদ্দাম হোসেন সেখানে ছিলেন না। বারও ছিল না। তাই মাইক্রোবাস উঠে যায় রেললাইনের ওপর। এদিকে এ ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগে শুক্রবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় দারোয়ান সাদ্দাম হোসেনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার (৩০ জুলাই) সকালে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। যেখানে সাদ্দামকে একমাত্র আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর সোয়া ২টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা খৈয়াছড়া পানির ঝর্ণা দেখতে মিরসরাই যান। দুপুরে সেখান থেকে ফেরার পথে খৈয়াছড়া রেলস্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় চট্টগ্রামগামী ট্রেন মহানগর প্রভাতীর সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টেনে নিয়ে যায়। গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ১১ জনের প্রয়ান হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছয়জনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠায়। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিথরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় হতাহতরা হলেন- উপজেলার আজিম সাব-রেজিস্ট্রার হাজী মোঃ ইউসুফের ছেলে মাইক্রো চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), চিকনদন্ডী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মোহাম্মদ হাসান (১৭) ইলিয়াছ ভুট্টোর ছেলে জিয়াউল হক সজীব। (২২) একই ইউনিয়নের খোন্দকার পাড়ার আব্দুল হামিদের ছেলে ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩) ৮নং ওয়ার্ডের আজিজ মেম্বার বাড়ির জানে আলমের ছেলে, শিক্ষক মজিদ আব্বাস চৌধুরী বাড়ির বাদশা চৌধুরীর ছেলে রিদুয়ান চৌধুরী। ২২), পারভেজের ছেলে সাগর (১৭) ও একই এলাকার আব্দুল ওয়াদুদ মাস্টার বাড়ীর আব্দুল মাবুদের ছেলে ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭), ৬ নং ওয়ার্ডের মোজাফফর আহমদের ছেলে মোছাব আহমেদ হিসাম (১৬), তাসমির হাসান ( ১৭) আব্দুল আজিজ বারীর মৃত পারভেজের ছেলে মো. মনসুর আলমের ছেলে মো. মাহিম (১৭), মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯) ২নং ওয়ার্ডের মোতাহের হোসেনের ছেলে মো. আবু মুসা খান দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে রিলিফ ট্রেন এসে দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটি সরিয়ে দিলে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ দিকে দুর্ঘটনার পরপরই বিভাগীয় পার্সোনেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনছার আলীকে তলব করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে।
উল্লেখ্য, একটি ট্রেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে প্রায় ৪০০ গজের মত জায়গার প্রয়োজন। তবে ঘটনার সময়ে মাইক্রোবাস আর ট্রেনের দুরত্ব এতটাই কম ছিল যে সবকিছু জানার পরেও কিছুই করার ছিল না। বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে যাচ্ছে বিষয়টি জেনেও নির্বাক থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তার পরেও যতদুর সম্ভব চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনার এমনটাই দুর্ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেছেন ট্রেন চালক জহিরুল।