অবশেষে মুখ খুললেন সাইফের হামলাকারী, মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের উপর হামলার ঘটনায় ভারতজুড়ে চলছে তোলপাড়। ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ শরীফ উল ইসলাম শেহজাদকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। অবশেষে পুলিশের জেরায় মুখ খুলেছে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং স্বীকার করেছে নিজের অপরাধ।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শরীফুল জানান, তিনি সাইফের বাড়ি এবং পতৌদি প্যালেস সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তার দাবি, চুরি করার উদ্দেশ্যেই তিনি ওই বাড়িতে ঢুকেছিলেন এবং জানতেন না সেখানে সাইফ আলী খান থাকেন। হামলার শিকার ব্যক্তি যে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা, তা পরে জানতে পারেন তিনি।

এদিকে, আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। ঘটনা পুনঃতদন্তের জন্য শরীফুলকে সাইফের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন করবে পুলিশ।

অভিযুক্তের কর্মকাণ্ডের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আরও অনেকেই। রেস্তোরাঁয় কর্মী সরবরাহের কাজে নিয়োজিত যে ঠিকাদারের মাধ্যমে শরীফুল কাজ করতেন, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রেস্তোরাঁর ম্যানেজার জানান, ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সব কর্মীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ম্যানেজারের ভাষায়, “ঠিকাদারদের ওপর আমরা কর্মীদের বিশ্বস্ততা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেই। কিন্তু তদন্তে তার গাফিলতি স্পষ্ট হয়েছে। তাই আমরা তাকে সরিয়ে দিয়েছি।”

শরীফুল ওরলির চাকরি হারানোর পর ঠাণে এলাকায় কাজ নেন এবং সেখানে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করেন। তবে রেস্তোরাঁর ম্যানেজার জানিয়েছেন, ওই সময়ে শরীফুলের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি মধ্যরাতে সাইফ আলী খানের বান্দ্রার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে। ওই সময় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় অভিনেতাকে। গুরুতর জখম অবস্থায় মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাইফকে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শরীর থেকে ২-৩ ইঞ্চি ধারালো বস্তু বের করেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে সাইফ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


টিউলিপের দুর্নীতির অনুসন্ধান, কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালানোর পর তার পরিবার ও নিকটজনদের দুর্নীতির খবর ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে। এবার তার বোন শেখ রেহানার মেয়ে এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। যুক্তরাজ্যে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে তার পারিবারিক সম্পদের অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছে।

দুদকের তদন্তে গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায় একটি ৩০ বিঘার বাগানবাড়ির সন্ধান মিলেছে, যা স্থানীয়ভাবে ‘টিউলিপ’স টেরিটরি’ নামে পরিচিত। এই বাগানবাড়িতে রয়েছে বিশাল পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট, অভিজাত ডুপ্লেক্স বাড়ি ও বাংলো। বাগানবাড়ির প্রধান ফটকে রক্তরাঙা ফুলের সাজ এবং সাদা টাইলসে লেখা নামফলকে দেখা যায় ‘টিউলিপ’স টেরিটরি, কানাইয়া, গাজীপুর, ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮’। এলাকাবাসীর মতে, এই বাগানবাড়ির মালিকানা শেখ রেহানার পরিবার বা তার ভাইদের বলে ধারণা করা হয়।

বাগানবাড়ির ভেতরে রয়েছে সারি সারি সুপারি গাছ, পাকা রাস্তা, এবং শত শত রাজহাঁসের কোলাহলে মুখর পরিবেশ। কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, এখানে হাঁস-মুরগি পালন এবং ডিসপোজেবল অ্যাপ্রোন ও সার্জিক্যাল গাউন তৈরির কারখানা চালু রয়েছে। এসব পণ্য সিএমএইচ এবং এভারকেয়ার হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। স্থানীয়দের মতে, বাগানবাড়ির চারপাশে উচ্চমূল্যের সম্পত্তির এই বিস্তৃত এলাকা রেহানা পরিবারের সম্পদ বলে চিহ্নিত।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাগানবাড়িতে নিয়মিত শেখ রেহানা এবং তার পরিবারের সদস্যরা অবস্থান করতেন। শীতের সময় তারা এখানে কয়েক দিন কাটাতেন বলে স্থানীয়রা জানান। বাগানবাড়ির ভেতরে আগে বিচার সালিশও বসত, যেখানে শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক বিচারকের ভূমিকা পালন করতেন।

এছাড়া দুদকের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে আরেকটি বাংলোর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা শেখ রেহানার নামেই রয়েছে। এখানে তিনি এবং শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে সময় কাটাতেন। আরও জানা যায়, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে একটি নিটিং কারখানার পাশেই শেখ রেহানা ১০ তলা একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন, যা তিনি সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন।

৫ আগস্টের পর গাজীপুরের এই বাগানবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, হামলাকারীরা বাংলোতে ভাঙচুর চালিয়ে সব মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়। বাগানবাড়ির সম্পত্তি এখন একাধিক বাউন্ডারিতে ভাগ করে রেহানা ও তার ভাইদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে বলে জানা যায়।

এই বিশাল সম্পদের উৎস এবং মালিকানা নিয়ে দুদক এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ রেহানার পরিবারের সম্পদের এই অনুসন্ধান কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়ার মতো নতুন নতুন তথ্য সামনে আনছে। আন্তর্জাতিকভাবে টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে তদন্ত এবং তার পরিবারের সম্পদের এতো বিশাল বিস্তৃতি এখন আলোচনা এবং বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।