নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, যেমন জনপ্রিয়তা তেমনি কার্যক্রম এই সংসদ সদস্যের। তবে দলে থেকেও নারায়ণগঞ্জের মেয়র প্রার্থী আইভীর জন্য এখনো তাকে কোনো প্রকার কোনো কথা বা কাজ করতে দেখা যায়নি। এই নিয়েই ছিল মানুষের মনে প্রশ্ন। এখানে নিজ দলের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য সব জায়গায় আ.লীগ কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে শামীম ওসমান কেন নয়? অবশেষে মুখ খুললেন এই সংসদ সদস্য ব্যাপারগুলো নিয়ে।
সিটি নির্বাচন ঘিরে নারায়ণগঞ্জ জোর প্রচার চললেও, মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। অবশেষে এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন শামীম ওসমান। জানিয়েছেন, সময় হলে সব কিছু বলবেন।
নারায়ণগঞ্জের পুরান কোর্ট রোডে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বুধবার সন্ধ্যায় একথা বলেন শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই নেতা।
বক্তব্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, ‘অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শুনেছি, সময় হলে সব কিছু বলব। আমি রাজনীতি করি দেশের মানুষকে ভালোবাসার জন্য। রাজনীতিটা আমার কাছে ইবাদত।
‘আশেপাশে এতো মুখোশ পড়া মানুষ, মেকআপ করা মানুষ। তাদের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে বিভৎস চেহারা। মুখোশ খুলে গেলে, তাদের চেহারা দেখে আতঙ্কিত হই।’
রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা থাকলেও, এবারের সিটি নির্বাচন নিয়ে সরব নন শামীম ওসমান। মেয়র পদে তার সমর্থন নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও সরাসরি কিছুই বলছেন না তিনি।
সাংবাদিকদের সততা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘সত্য বললে আঘাত আসবেই। আর যদি সত্য বলতে না পারেন, তাহলে অন্তত মিথ্যা বইলেন না। আমার মনে হয়, এটিই হওয়া উচিৎ মানুষের আদর্শ।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বঙ্গবন্ধুর করা আইন প্রগতিশীল ও কল্যানমুখী ছিল। নতুন আইনটি তেমন সহায়ক নয়। সাংবাদিকদের সার্বিক কল্যাণে নতুন আইন পুনঃবিবেচনা করতে আমি প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ অন্যদের বলব।’
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ নানা শ্রেণির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আফজাল হোসেন পন্টির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টের সদস্য কাশেম হুমায়ন, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুনুর রশিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজ্জাদ আলম খান তপু, বিকেএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি মাসুদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আরিফ আলম দীপু, রুমন রেজা, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালামসহ সাংবাদিক নেতারা।
নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনে টানা তৃতীয় জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তবে তার সমর্থকদের অনেকে মনে করেন শামীম ওসমান প্রকাশ্যে সমর্থন দিলে নৌকার ভোটের পাল্লা ভারী হবে। আবার অনেকে বলছেন, শামীমের সঙ্গে দূরত্বটাই আইভীর জনপ্রিয়তায় সহায়ক হয়েছে।
২০১১ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আইভীর লড়াই হয় আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমানের সঙ্গে। আইভী জেতেন এক লাখ ভোটে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে সমর্থন না দিয়ে মেয়র পদটি উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার ভোটের আগের রাতে সরে যান।
২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে হওয়া দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খান ৮০ হাজার ভোটে পরাজিত হন নৌকার আইভীর কাছে। সে নির্বাচনেও মেয়র আইভীকে সমর্থন প্রশ্নে সমালোচনায় ছিলেন শামীম ওসমান।
শামীম ওসমান বলেন, ‘আশেপাশে এতো মুখোশ পড়া মানুষ, মেকআপ করা মানুষ। তাদের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে বিভৎস চেহারা। মুখোশ খুলে গেলে, তাদের চেহারা দেখে আতঙ্কিত হই।’
অনুষ্ঠানে অনেক কথাই বলেন শামীম ওসমান। তবে মানুষের মনের প্রশ্ন যেটার উত্তর তিনি সরাসরি নিজ মুখে কিছুই বলেননি বলেছেন সময় হলে সব বলবো। তবে যে কথাগুলো তিনি বলেছেন তাতে আর মানুষের বুঝতে বাকি নেই সময় হলে তিনি কি বলার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। মুখোশের আড়ালে মানুষগুলো সত্যিই খুব খারাপ হয়, যেটা শামীম ওসমান নিজেও বুঝে গেছেন।