প্রতিদিনের মতই ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের সহধর্মীনি মাহমুদা খানম মিতু। কিন্তু তিনি নিজেও জানতেন না, এ দিন ছিল তার জীবনের শেষদিন। আনুমানিক সকাল ৯-১০ টার দিকে প্রকাশ্যে গুলি হ”ত্যা” করা হয় তাকে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দায়ের করা এক মামলায় ফেঁসে যান বাবুল আক্তার নিজেই।
তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেখানে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া চার্জশিটে আরও ছয়জনের নাম রয়েছে।
পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরকীয়া আসক্ত বাবুল আক্তার ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্ত্রীকে ”হ”’ত্যা” করে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে।
তবে ছেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বাবা আবদুল ওয়াদুদ মিয়া। তিনি দাবি করেন, ‘মিতু ‘হ”’ত্যা” মাম’লাটি বহু বছর ধরে পুলিশ তদন্ত করে আসছে। ওই তদন্তে তার ছেলের সম্পৃক্ততা কোথাও পাওয়া যায়নি।
ওয়াদুদ মিয়ার পাল্টা অভিযোগ, “বাবুলকে জোরপূর্বক চাকরি থেকে বরখাস্ত করা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের সোর্স মুসাকে গ্রেপ্তার না করা, ক্র’সফা’য়া’রের’ ভয় দেখিয়ে বাবুলের বিরু’দ্ধে স্বীকারোক্তি আদায় করা- এগুলো একই সূত্রে তৈরি।” পিবিআই বিষয়টি তদন্তের চেয়ে বাবুলের তথাকথিত বহিরাগত কাহিনী প্রমাণে বেশি আগ্রহী। কারণ বাবুলের বিরুদ্ধে এ ধরনের খবর মিডিয়ার কাটতি বাড়ায়।
তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে পিবিআই মিতু ‘হ”’ত্যা” মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না, তবে কীভাবে চরম পক্ষপাতমূলক তদন্ত করে মামলায় বাবুলের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে তারা বেশি আগ্রহী।
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে, তথাকথিত পরকীয়া প্রেম জোড়াতালি দিয়ে যুক্ত করে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রমাণ করে বাবুলের সাজা হয়তো মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে কোনোভাবে দেওয়া যাবে। কিন্তু এই তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিতু ‘হ”ত্যা”’র প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে না। এমনটাই মনে করেন বাবুল আক্তারের বাবা।
বাবুল আক্তারের বাবার দাবি, ‘বৌমার সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক খুব মধুর ছিল। আমার বেয়াই মোশাররফের দ্বিতীয় মামলার পরই জানতে পারি তাদের সম্পর্ক খারাপ। যেখানে বৌমা মারা হওয়ার এক বছর পর পর্যন্ত বিভিন্ন মিডিয়ায়ও আমার বিয়াই বলেছেন, দুজনের খুব মধুর দাম্পত্য জীবন ছিল।’
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বাবা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বাবুল দোষী সাব্যস্ত হলে আমি বিনা দ্বিধায় তা মেনে নেব। তিনি বলেন, আমি পিবিআই ছাড়া অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে পুরো ঘটনার সম্পূর্ণ নতুন করে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে, আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়ার আগে মামলার বিবরণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাই একজন চৌকস পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি জঙ্গিবাদ, স্বর্ণ চোরাচালান, অপরাধ দমন ও মাদকবিরোধী অভিযানে আকাশচুম্বী সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশের জন্য কাজ করেছেন।
এদিকে মিতু হত্যা মামলার আরেকটি কারণ রহস্যজনক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা। আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এই ব্যক্তি বলেন, বাবুল আক্তারের নির্দেশে মিতুকে ”মা”রা” করা হয়েছে। জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনাও দেন তিনি। কিন্তু উল্টো তিনি আদালতে একটি বিশেষ ডায়েরিও দেন।
ভোলা বলেন, ‘আমি এখনও বলছি, আমাকে ব’ন্দু’কের মু’খে তুলে নেওয়া হয়েছে। তারা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ওই অফিসে নিয়ে যায়। ভয়ে দেখিয়ে একটা কাগজ দেয়া হলো। সেই কাগজ আবার আদালতে পড়লাম।
এদিকে মিতুর মৃত্যুর নিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বিদেশি এক তরুণীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক জড়ান বাবুল আক্তার। আর এ নিয়ে প্রায় ঝগড়া হতো মিতুর সঙ্গে। সেই আলোকে ভাড়াটে অপরাধীদের নিজ স্ত্রীকেই সরিয়ে দেন বাবুল।