বর্তমান সময়ে দূর্নীতি সহ নানা ধরনের অনিয়মের প্রবনতা মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি দেশের এক শ্রেনীর ব্যক্তি রয়েছে যারা কিনা নানা কৌশলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ উপার্জন করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমানের অর্থ। এমনকি দেশের অর্থ পাচার করছে বিদেশে। তবে এমন অপরাধীদের বিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এবং এই সকল অসৎ ব্যক্তিদের দমনে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে দূর্নীতি দমন কমিশন। সম্প্রতি এই কমিশন বিদেশে অর্থপাচারকরী ২৯ ব্যবসায়ীর তালিকা প্রকাশ করেছে দুদক।
বিদেশে অর্থপাচারকারী ১৪ প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যক্তির নামের তালিকা প্রস্তুত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকায় রয়েছে আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসের ওরফে প্রিন্স মুসা, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার ছেলে তাবিথ আউয়ালসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নাম। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান গণমাধ্যমকে জানান, রোববার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এই তালিকা দাখিল করবে দুদক।
১৪ প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যবসায়ীর তালিকা নিচে দেওয়া হলো-
(১) আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাল্টিমোড লি., অ্যাংকর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা। (২) মিজ নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, মাল্টিমোড লি., অ্যাংকর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা। (৩) তাবিথ আউয়াল, মাল্টিমোড লি., অ্যাংকর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা। (৪) তাফসির আউয়াল, মাল্টিমোড লি., অ্যাংকর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা। (৫) তাজওয়ার মো. আউয়াল, মাল্টিমোড লি., অ্যাংকর টাওয়ার, ১০৮ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা। (৬) মোগল ফরিদা ওয়াই, ৮০-৭২, তাইরন পিআই, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক, ইউএসএ। (৬) শহিদ উল্লাহ, ২৩৫, স্যাডল রজি পেলস, দ্য উড ল্যান্ডস, টেক্সাস, ইউএসএ। (৭) চৌধুরী ফয়সাল, বাড়ি # ২৩, রোড# ২৩, ব্লক-বি, বনানী, ঢাকা। (৮) আহমাদ সামির, অ্যাপার্টমেন্ট # ৪বি, ১৫ ইউনাইটেড নেশানস রোড, বারিধারা, ঢাকা। (১০) ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ লি., ৫০ মহাখালী বা/এ, ঢাকা। (১১) মুসা বিন শমসের, ভেনাস ওভারসিজ কোং, হোল্ডিং ব্লক-আই, বনানী, ঢাকা। (১২) ফজলে এলাহী, ডাইনামিক এনার্জি, হোল্ডিং বাড়ি # ৪২৪, রোড # ০৭, বারিধারা ডিওএইচএস, ঢাকা। (১৩) কেএইচ আসাদুল ইসলাম, ইন্ট্রিপিড গ্রুপ, ধানমন্ডি, ঢাকা। (১৪) জুলফিকার আহমেদ, খালেদা শিপিং কোম্পানি, বাড়ি # ১৩২, রোড # ০৫, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা। (১৫) তাজুল ইসলাম তাজুল, জেমিকো ট্রেড ইন্টা. চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ। (১৬) মোহাম্মদ মালেক, বেঙ্গল শিপিং লাইনস, ১০১ আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। (১৮) ইমরান রহমান, ওসান আইস শিপিং কোম্পানি, ইপিজেড ঢাকা। (১৭) মোহাম্মদ এ আউয়াল, শামস শিপিং লি., ৭৭, মাওলানা শওকত আলী রোড, লালখান, চট্টগ্রাম। (১৯) এরিক জনসন আনড্রেস উইলসন, ডব্লিউএমজি লি. বাড়ি # ১৪, রোড # ১৩, সেক্টর # ৪, উত্তরা, ঢাকা। (২০) ফারহান ইয়াকুবুর রহমান, ইন্ট্রিডিপ গ্রুপ, বাড়ি # ৫, রোড # ৫১, গুলশান, ঢাকা। (২১) তাজুল ইসলাম, জেমিকো ট্রেড ইন্টা., বালুর মাঠ, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ। (২২) আমানুল্লাহ চাগলা, পদ্মা টেক্সটাইল, বাড়ি # ৪৫৮, লেন-৮, ডিওএইচএস, বারিধারা ঢাকা। (২৩) মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, নিউটেকনোলজি ইনভেস্টমেন্ট, মস্কো, রাশিয়া। (২৪) মোহাম্মদ রেজাউল হক, মাল্টা। (২৫) মোহাম্মদ কামাল ভুইয়া, তুহিন-সুমন, জেমিকো ট্রেড ইন্টা:, বালুর মাঠ, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ। (২৬) মাহতাবা রহমান, সেলকন শিপিং কোম্পানি, বাড়ি # ৮৭এ, রোড # ০৬, ডিওএইচএস, বনানী, ঢাকা। (২৭) ফারুক পালওয়ান, জেমিকো ট্রেড ইন্টা, নারায়ণগঞ্জ। (২৮) মাহমুদ হোসাইন, গ্লোবাল এডুকেশন সিস্টেম, আয়ারল্যান্ড। (২৯) শাহনাজ হুদা রাজ্জাক, সাউদার্ন আইস শিপিং কোম্পানি, ঢাকা ইপিজেড।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত বছরের ২২ নভেম্বর স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চান হাইকোর্ট। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পরে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিদেশে অর্থপাচার বিষয়ে দুদক, সিআইডি, বিএফআইইউ ও এনবিআর হাইকোর্টে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। হাইকোর্ট কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যারা অবৈধভাবে গাড়ি বাড়ি তৈরি করেছেন তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছিলেন। এর সঙ্গে জড়িতদের নাম জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু সংস্থাগুলো সম্পূর্ণ তথ্য দিতে পারেনি। তাদের এ তথ্য পর্যাপ্ত নয় বলে সেদিন তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দীর্ঘদিন পর রোববার (৫ ডিসেম্বর) অর্থপাচারকারী ১৪ প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যক্তির নামের তালিকা হাইকোর্টে জমা দেবে দুদক।
দূর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধে দূর্নীতি দমন কমিশন বিশেষ ভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে এমন অনিয়মকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তির সম্মুখীন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি যে তালিকা প্রকাশ করেছে এই সকল অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।