অবশেষে পাকিস্তানের নির্বাচনের ফল ঘোষণা, সরকার গঠন করছে যারা

অবশেষে পাকিস্তানের নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের দুই দিন পর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করে।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দেশের সব আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।

কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ইসিপি ঘোষিত ফলাফলে সর্বাধিক আসন জিতেছে। তারা 264টি আসনের মধ্যে 101টিতে জয়ী হয়েছে। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আরেক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) পেয়েছে ৭৫টি আসন। অন্যদিকে বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি আসনে জয়ী হয়েছে। মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্য দলগুলো পেয়েছে ১৭টি আসন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করে ইসিপি।

এমডব্লিউএমের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন ইমরান সমর্থকরা
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ৩৩৬টি। এবার জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনে ভোট হয়েছে। একটি আসনের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে ২৬৪টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার গঠনের জন্য 134টি আসনের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। এই আসনগুলির মধ্যে 60টি মহিলাদের জন্য এবং 10টি সংখ্যালঘুদের জন্য।

ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে 101টি আসন জিতেছে, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে। দলটি পাকিস্তানের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজনীয় ১৩৪টি আসনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এ জন্য পিটিআই-এর প্রয়োজন আর মাত্র ৩৩টি আসন।

পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলী খান বলেছেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পিটিআইকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। তারাই জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে- তাই সংবিধান অনুযায়ী তাদের সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

নওয়াজ শরিফ বলছেন, পিটিআই সমর্থকদের তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও এই নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন)ই সবচেয়ে বড় দল। এর ফলে অন্যরাও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকার গঠন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, তাদের জোট গঠন করতে হবে। তবে কোন দলের নেতৃত্বের জোট গঠন করবে-এবং এটি ইমরান খানের পিটিআই দ্বারা সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে জোট হবে কিনা, যারা শীর্ষ আসন জিতেছে তা দেখা বাকি।

পাকিস্তানি মিডিয়ার মতে, ইমরান সমর্থকদের সরকার গঠনে বাধা দিতে নওয়াজ এবং বিলওয়াল ভুট্টোর দল ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে সম্মত হয়েছে। পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট এবং নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ বিলওয়াল ভুট্টো এবং তার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বাসায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শাহবাজ শরিফ। এ সময় তাদের মধ্যে সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে জিও নিউজ জানিয়েছে যে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মজলিস ওয়াহদাত-ই-মুসলিমীন (এমডব্লিউএম) নামের একটি দলের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন। নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিধান থাকায় তারা দলে যোগ দিচ্ছেন।

শোনা যাচ্ছে যে বিজয়ী ইমরানপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এমডব্লিউএমের ছত্রছায়ায় একত্রিত হতে পারে এবং সরকার গঠনে ব্যর্থ হলেও একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।