রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাবেক প্রতিবেদক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা কেটেছে। পুলিশ তার আসল পরিচয় নিশ্চিত করেছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ওই নারী সাংবাদিকের পরিচয় নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল জব্বার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আঙুলের ছাপের মাধ্যমে অভিশ্রুতির আসল পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুক্রবার অভিশ্রুতির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছেন মা বিউটি বেগম। প্রতিবেশীরা ভিকটিমের মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলে।
নিহতের ছোট বোন শারমিনা সুলতানা ঝর্ণা জানান, সম্প্রতি তার বড় বোন রিষ্টি খাতুন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে এই নামে সাংবাদিকতা করতেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা বলেন বৃষ্টি। বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও মা বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতেন। বড় বোনের মৃ/ত্যুতে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। দুই মাস আগে অভিশ্রুতি শেষবার গ্রামে এসেছিলেন।
অভিশ্রুতির হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হতে পারে না। আমার বোন মনে-প্রাণে একজন মুসলিম। তিনি কখনো তার ধর্ম ত্যাগ করেননি। কিন্তু সম্প্রতি তিনি অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে ফেসবুক আইডি খুলে সাংবাদিকতা করতে ওই নাম ব্যবহার করেন।
বেতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, মাস দুয়েক আগে রাজধানীর ফার্মগেটে তার সঙ্গে দেখা ও কথা হয়। ধর্মান্তরের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে তিনি মনে করেন।
বিকেলে শাবলুল আলম সবুজ নামে এক ব্যক্তি নিজেকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর বাবা দাবি করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আসেন। তিনি দাবি করেন, তিনি মুসলিম হলেও অভিশ্রুতি নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দেন।
শাবলুল আলম সবুজ বলেন, অভিশ্রুতি আমার মেয়ের আসল নাম নয়। আমার মেয়ের নাম বৃষ্টি খাতুন। আমি কেন মিথ্যে বলবো দুদিন আগে ফোনে কথা হয়েছে((নিহত অভিশ্রুতির)। বৃষ্টি আমার তিন মেয়ের মধ্যে বড়। আরও দুই মেয়ে আছে। আমি কেন আমার মেয়েকে নিয়ে মিথ্যা বলব? আমাদের খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। আমি শুধু জানতাম যে তিনি হিন্দুদের সাথে চলাফেরা করতেন।
জানা যায়, শাবলুল আলম সবুজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। অভিশ্রুতি রমনা কালী মন্দিরে নিয়মিত যেতেন। সামাজিকভাবে তিনি মন্দিরের সকলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। সে তার বাবা-মাকে কোথাও প্রকাশ করেনি।
অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর জীবনীতে দেখা যায়, তিনি পিতার নাম অভিরূপ শাস্ত্রী এবং মায়ের নাম অপর্ণা শাস্ত্রী লিখেছেন। তিনি তার বর্তমান ঠিকানা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, মৌচাক লিখেছিলেন।