বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কারিগরি দল। ৩৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জোটের মতামতের পাশাপাশি পরিস্থিতি পরিবর্তনে ২১টি সুপারিশ করেছে ২৭টি দেশের এই জোট।
৩৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি ইইউর ইলেকশন অবজারভেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি সাপোর্ট (ইওডিএস) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ছিল না। একদিকে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিল না অপর দিকে আন্দোলন করার স্বাধীনতাও সীমিত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গণগ্রেফতারকে কেন্দ্র করে আদালত পাড়ায় ব্যস্ত ছিল বিরোধী দল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি সমঝোতা এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ প্রতিযোগিতার কারণে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচনে কোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ছিল না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যালট বাক্স চুরির অভিযোগ ছাড়াও কিছু কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন স/হিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাচনের আগে, ইইউ প্রাক-নির্বাচন মিশন ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফর করে এবং সার্বিক পরিবেশ নিয়ে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করে। তবে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে ইইউ জানিয়েছে, তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসছে না। অবশেষে চার সদস্যের ইইউ টেকনিক্যাল টিম ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকে নির্বাচনের পর পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটি প্রায় দুই মাস বাংলাদেশে অবস্থান করেন।
গত নির্বাচনের দুই মাস পর ২৭টি দেশের এই জোট নির্বাচন সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে, ইইউ টেকনিক্যাল মিশন সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক নির্বাচনের জন্য মোট ২১টি সুপারিশ করেছে।
উল্লেখযোগ্য পরামর্শ হল-
জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ সহ সমস্ত সংসদীয় সম্পর্কিত আইন, প্রবিধান এবং বিধিগুলির একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আইনি নিশ্চয়তা বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনার বোর্ডের নিয়োগ ব্যবস্থা হতে হবে যোগ্যতাভিত্তিক এবং স্বাধীন নিয়োগের মাধ্যমে। যা জনস্বার্থে কাজ করতে কমিশনের হাতকে শক্তিশালী করবে। সর্বোত্তম অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি স্বাধীন প্যানেল বিষয়টি তদারকি করতে পারে।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০২৩-এর বিধানগুলিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতি রেখে পর্যালোচনা করা উচিত। অস্পষ্ট এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধিনিষেধ সরানো যেতে পারে।
সিভিল সোসাইটি কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা এবং অত্যধিক আমলাতান্ত্রিক নিবন্ধন সহ বিদেশী অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) আইন ২০১৬ এর বিধানগুলি যাতে সুশীল সমাজ বিধিনিষেধ ছাড়াই কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
ভোট ও গণনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বর্ধিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থগিত করা উচিত।