হঠাৎ করেই দেশে বেশ কিছু নিত্যেপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে মূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বেশ বিপাকে পড়েছে দেশের মানুষ। এদিকে দ্রব্যে মূল্য বৃদ্ধির তালিকায় প্রথম সারির অবস্থানে রয়েছে পেঁয়াজ। অবশ্যে গত কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি এবং সংকট নিয়ে বেশ বিপাকে পরেছে বাংলাদেশ। তবে এবার পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারন এবং দেশে মোট মজুতের পরিমান জানালো বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে এই মুহূর্তে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে। এমনটিই জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। টিপু মুনশি বলেন, আমাদের দেশে এই মুহূর্তে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে। ভারত ছাড়া মিয়ানমার থেকে যদি পেঁয়াজ আনা যায়, তাহলে কিন্তু এত প্রেশার (চাপ) পড়ার কথা না। তবে বৃষ্টিজনিত কারণে কিছুটা দাম বেড়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করব, যেন দাম সহনীয় মাত্রায় রাখা যায়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে অথচ শুধুমাত্র চারটি পণ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের আইনে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মসলাসহ ১৭টি পণ্য রয়েছে। আইনে এসব পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া আছে। বাকিগুলোর মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা নেই। তবে উৎপাদনসহ অন্যান্য পরিস্থিতি অন্যান্য মন্ত্রণালয় দেখে জানিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলোর আমরা মনিটর করার চেষ্টা করব। এর বাইরে অন্যান্য পণ্যে আমরা হস্তক্ষেপ করতে গেলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চারদিক থেকে চেষ্টা করছি যাতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যতদিন পর্যন্ত আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ না হব, ততদিন পর্যন্ত কখনো কখনো আমাদের মূল্য নিয়ে ক্রাইসিসে পড়তে হবে। আশার কথা হলো, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের উৎপাদন ভালো আছে। অন্তত এক লাখ টন পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়েছে। তারপরও এ সময়ে কিছুটা চাপ পড়ে চারদিক থেকে। আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করব না। পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পরও মানা হচ্ছে না, এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পেঁয়াজের ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর তিন মাসের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হতে পারে। পেঁয়াজে বর্তমানে পাঁচ শতাংশ শুল্ক আছে, ডালের কোনো শুল্ক নেই। যে কেউ আমদানি করতে পারে। চিনির এইচডি ও অগ্রিম ট্যাক্স আছে ও তেলের ওপর অগ্রিম ট্যাক্স প্রত্যাহারের জন্য আমরা আগেই চিঠি লিখেছি এনবিআরকে। আমরা আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে ফল পাব। পেঁয়াজের জন্য চার মাস সুবিধা চেয়েছি। অন্য দুটি পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা কোনো সময় উল্লেখ করিনি। সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয় জানিয়ে বাণিজ্য সচিব জানান, নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে।
প্রতিবছরেই প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বিপুল পরিমানের পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। তবে গত কয়েকবছরেই কোন প্রকার পূর্ব নির্দেশনা ছাড়াই ব্যবসায়িক চুক্তি ভঙ্গ করে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এতে করে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে এবং মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে দাম। তবে এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের বেশ কিছু দেশ থেকে আমদানি করেছে পেঁয়াজ।