শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে মেডিকেল ও জরুরি প্রয়োজন বাদে বাংলাদেশিদের জন্য অন্যান্য ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে ভারত। গত সাড়ে তিন মাস ধরে দেশটির ভ্রমণসহ অন্যান্য ভিসা কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, এই ভিসা স্থগিতের মাধ্যমে ভারত কোন বার্তা দিচ্ছে? কেন এখনো ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম স্বাভাবিক করেনি? গণমাধ্যম এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এরপর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উল্লেখ করে ভারত বাংলাদেশে তাদের ভিসা আবেদনকেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। যদিও পরে কিছুটা সীমিত আকারে চিকিৎসা ও জরুরি ভিসার আবেদন গ্রহণ শুরু হয়, অন্যান্য ভিসা ইস্যু এখনো বন্ধ।
বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে রয়েছে। শত দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ভারত ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করেনি। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা লোকবলের অভাবকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভারতের কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্যে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হলে ভিসা প্রক্রিয়া পুরোপুরি চালু হবে।
তবে নিরাপত্তা অজুহাত হিসেবে তুলে ধরার বিষয়টি অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে উভয় পক্ষেরই ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একপাক্ষিক উদ্যোগ সম্পর্ক উন্নয়নে যথেষ্ট নয়।’
অক্টোবরের শুরুতে নিউইয়র্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভিসা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। জয়শঙ্কর জানান, প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা সংকটের কারণে ভিসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, তবে এটি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভারতের ভিসা আবেদনকেন্দ্রটি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এখানে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ভিসা ইস্যু করা হতো, যা বছরে ১৫-১৬ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে ভ্রমণ করেন। তবে এখনো কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।