শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতি ‘অভিমানের সুরে’ মন্তব্য করেন, “তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না।” এ বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে কারণটি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কের অবনতি হয়, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ এবং শ্রম আইন সংশোধন ইস্যুতে। এই ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয় এবং যোগাযোগ সীমিত হয়ে যায়। সাধারণত বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করলেও চীন ও ভারত সফর থেকে ফেরার পর তা ঘটেনি। সম্পর্কের অবনতি এমনটাই ঘটেছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনের দিকে পা-ই বাড়াননি। এই যখন অবস্থা, তখনই বিচারক নিয়োগের প্রশ্নটি সামনে আসে। গণভবন বা আইন মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা দেখে প্রেসিডেন্ট বিরক্ত হন।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “১৮ই এপ্রিল ২০২৪ প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে সামগ্রিকতা নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া উল্লেখ রয়েছে। নিয়োগের পদ্ধতি স্পষ্ট না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে প্রথাগতভাবে নিয়োগ হয়ে আসছে। বিষয়টি লিখিত না থাকলেও আলোচনাক্রমে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার নিয়ম চালু আছে। প্রেসিডেন্টই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এই নিয়ম ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বঙ্গভবনে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সারসংক্ষেপ বহনকারী ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
এতে বিরক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট পাল্টা একটি চিঠি পাঠান সই না করেই। এতে তিনি বলেন, যেভাবে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে তাতে প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘আমি কিছুই জানি না, অথচ আমাকেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। প্রচলিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্টকেই পুতুল বানানো হয়েছে। শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন? দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার কী অর্থ আছে’।”
মানবজমিনের ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, “আইনমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। সবমিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ব্যথিত হন-এটাও উল্লেখ ছিল চিঠিতে। এই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর দপ্তরে। ওদিকে প্রচলিত শ্রম আইন নিয়েও ভিন্নমত দেখা দেয়। আলোচনা না করে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর নেয়ার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে প্রেসিডেন্ট মনঃক্ষুণ্ন হন। এতে করেই বঙ্গভবন ও গণভবনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। সম্ভবত এসব কারণেই হাসিনা ৫ই আগস্ট ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনেও কোনো যোগাযোগ করেননি।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ই এপ্রিল রাষ্ট্রপতি একটি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে সংবিধান অনুযায়ী বিচারক নিয়োগে প্রথাগতভাবে রাষ্ট্রপতির পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য চাপ দেওয়া হয়, যা তাকে বিরক্ত করে।
রাষ্ট্রপতি তার প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেন, “প্রচলিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতিকে পুতুল বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” এছাড়া, শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা ছাড়াই স্বাক্ষরের জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়, যা সম্পর্কের অবনতির আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সম্ভবত এই কারণেই ৫ই আগস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।