দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের আকসেকি জেলার সারহাসিলার পাড়ায় অবস্থিত ৬০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক সারহাসিলার মসজিদটি অবশেষে সংস্কারের কাজ শেষে পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। এই মসজিদটি তুরস্কের প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন, যা আনাতোলিয়ান সেলজুক আমলে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটির সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে, তবে করোনাভাইরাস মহামারি এবং অন্যান্য কিছু প্রতিকূলতার কারণে সংস্কার কাজ দীর্ঘায়িত হয়। অবশেষে ২০২৪ সালে মসজিদটি আবারও নামাজের জন্য উন্মুক্ত করা হলো।
সারহাসিলার মসজিদটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর কাঠের কাজ। মসজিদের মিরহাব, মিম্বর, ছাদ, জানালা, দরজা থেকে শুরু করে নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কাঠের তৈরি। সারিহাসিলার গ্রাম সংস্কৃতি ও পর্যটন অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেহমেত ওরহান কেন জানান, মসজিদটির মিরহাব, মিম্বর এবং গম্বুজ যেগুলো ৬০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো এখনো অক্ষত রয়েছে। এগুলো মসজিদের মূল স্থাপত্যশৈলীর প্রতীক হিসেবে টিকে আছে।
মসজিদটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হওয়ায় এর কাঠের ছাদ ও দেয়ালগুলি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, মেঝের অবস্থাও নাজুক ছিল। মসজিদটির ভেতরে বিশ্রামের জায়গা এবং প্রার্থনার স্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই এগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সংস্কার করা হয়েছে, যাতে এর ঐতিহ্যবাহী রূপ বজায় থাকে। প্রাচীন কাঠের তৈরি মসজিদটির সংস্কারকাজে বিশেষজ্ঞ কারিগরদের নিয়োগ করা হয়, যারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রতিটি কাঠের নিখুঁত সংস্কার সম্পন্ন করেছে। এই মসজিদটির প্রতিটি কাঠের কাজ আনাতোলিয়ান সেলজুক আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, যা একে ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে স্থান করে দেয়।
এই মসজিদটি শুধু ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি তুরস্কের স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অপরিহার্য অংশ। ৬০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি সেই সময়ের সেলজুক স্থাপত্যশৈলীর অসাধারণ উদাহরণ। মসজিদটির কাঠের নির্মাণশৈলী এবং এর স্থাপত্য কৌশল তৎকালীন সেলজুকদের নির্মাণশিল্পের প্রতি গভীর প্রশংসার সুযোগ করে দেয়। এটি তুরস্কের মুসলিম ইতিহাসের অংশ হিসেবে টিকে আছে এবং বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে থাকবে।