শুল্ক কাটা এটা নতুন কিছু নয়। প্রাচীনকাল থেকেই শুল্ক কাটার প্রচলন রয়েছে। স্বভাবতই একটি দেশ চালাতে গেলে সরকারের যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার সিংহভাগই আসে এই শুল্ক থেকে। দেশ চালানোর জন্য জনগণের টাকা ব্যবহার করেই প্রতিটা সরকার দেশ চালাই। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের লাখপতি দের ব্যাংক থেকে টাকা কাটা শুরু প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। একের পর এক ফোন আসা শুরু হয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে।
ঢাকা- ব্যাংক হিসাবে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে আবগারি শুল্ক কাটা শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা কাটা হচ্ছে।
সম্প্রতি হঠাৎ করে ব্যাংক থেকে টাকা কাটায় অনেকে উদ্বেগ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন।
ব্যাংকগুলো জানায়, প্রতি বছরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষে ব্যাংকগুলো পঞ্জিকাবর্ষ (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ধরেই আবগারি শুল্ক কেটে রাখে। এরপর তা সরকারি কোষাগারে জমা করে। এবছরও তাই করা হয়েছে। শুল্ক কাটার পর সেগুলো সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়।
এনবিআর জানায়, সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আবগারি শুল্ক আদায় হয়েছে।
আবগারি শুল্ক কাটার নিয়ম হলো, গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে যদি জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এক লাখ টাকার কম থাকে তাহলে কোনো আবগারি শুল্ক বসে না। অর্থাৎ বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে তা আবগারি শুল্কমুক্ত।
আর ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা থাকলে ১৫০ টাকা এবং ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এ ছাড়া ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায় ৩ হাজার টাকা; ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকায় ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ওপরে থাকলে ৪০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়।
প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়ী হিসাব (যেমন, বেতন-ভাতার টাকা কিংবা সারা বছর যেসব হিসাবে লেনদেন হয়) থেকে আবগারি শুল্ক কাটে ব্যাংকগুলো। কারণ, ব্যাংকের হিসাব-নিকাশের সময় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস। অন্যদিকে স্থায়ী আমানতের হিসাবের ক্ষেত্রে যখন এফডিআর মেয়াদপূর্তি হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে আবগারি শুল্কের টাকা কেটে রাখা হয়।
এ বিষয়ে কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক আকসিরুল হক ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আবগারি শুল্ক কেটে রাখায় কয়েক দিন ধরে আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, গ্রাহকদের ভয়ের কিছু নেই।’
বাংলাদেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব এখন এক লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত জুন মাস শেষে এ ধরনের হিসাবসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৯১৮। প্রতিবছরই কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১০-১২ হাজার করে বাড়ছে। আর সার্বিকভাবে ব্যাংক হিসাব আছে কয়েক কোটি।
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে কোন লাভ হবে না কারণ এটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা। আর এভাবেই চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই রাজার আমলের থেকে খাজনা দেওয়া যেটা এখন শুল্ক নামে পরিচিত। তবে দিন যাচ্ছে শুল্কের মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে বেড়ে যাচ্ছে কেটে নেওয়া টাকার অঙ্ক। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কে ভয় না পাওয়ার পরামর্শের সাথে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এরপর কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে সরাসরি তাদের মনোভাব জানা যায়নি।