দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ মন্দা সময় পার করছে। বাংলা সিনেমায় প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে দর্শক। তারা সিনেমা হল গুলোতে যেয়ে আর সিনেমা দেখে না। যার ফলে এ ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অসংখ্য প্রেক্ষগৃহ এবং বেকার হয়ে পড়েছে এর সাথে জড়িত শ্রমীক-কর্মীরা। এবার দীর্ঘ ২২ বছর সিনেমা হলে না যাওয়ার প্রসঙ্গে যা বললেন খ্যাতিমান পরিচালক ও অভিনেতা কাজী হায়াৎ।
দীর্ঘ ২২ বছর পর প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ঈদের মুক্তিপ্রাপ্ত অনন্ত জলিল ও বর্ষা জুটির ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমাটি দেখেছেন দেশের খ্যাতিমান পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা কাজী হায়াৎ। সম্প্রতি তিনি লায়ন সিনেমা হলে সিনেমাটি উপভোগ করেছেন।
এদিকে এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে সমালোচনা করে বলেন, তিনি নিজেই ২২ বছর প্রেক্ষাগৃহে যাননি, তাহলে সাধারণ মানুষকে কেন প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখতে বলেন!
তবে কোন অভিমানে নির্মাতা এতদিন সিনেমা হলে যাননি, এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় অসংখ্য সুপারহিট সিনেমার নির্মাতা কাজী হায়াতের সঙ্গে।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘২২ বছর হলে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি আমার। আমার দেখা শেষ সিনেমাটি ছিল ২২ বছর আগে বলাকা হলে নির্মিত ‘ইতিহাস’।সেসময় ‘ইতিহাস’ দেখে আমি বলাকার মালিককে বলেছিলাম, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়।’
কাজী হায়াৎ বলেন, ‘বলাকা হলের মালিক কারণ জিজ্ঞেস করলে আমি বলেছিলাম, ৩৫ মিলিমিটার এঙ্গেলে সিনেমাটির শুটিং করেছি। আপনারা নিচে থেকে ৩, উপর থেকে ৩, মোট ৬ মাইনাস করে ২৯ মিলিমিটার দেখাচ্ছেন। আমার সিনেমাটি পুরোটা দেখাচ্ছেন না। এ জন্য মামলা করা যায়। শুধু বলাকা নয়, মধুমিতাসহ ঢাকার অধিকাংশ সিনেমা হলে উপরে নিচে অনেক অংশ দেখা যেত না। যার ফলে আমি আর সিনেমা দেখতে যায়নি।
এত বছর পর সিনেমায় গেলেন কেন? নির্মাতা বলেন, ‘এখন ডিজিটাল হল ব্যবস্থা। নানা কারণে ডিজিটালে সিনেমা দেখার সুযোগ হয়নি। তবে ২২ বছর পর লায়ন সিনেমা হলে সিনেমা দেখার পর খেয়াল করলাম, অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য আমি লায়ন সিনেমা হল মালিককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এমন সিনেমা হলে দর্শক বাড়বে। বাংলা সিনেমা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
অনন্ত জলিল ও বর্ষা জুটির আমন্ত্রণে কাজী হায়াত গত শুক্রবার লায়ন সিনেমা হলে গিয়ে তাদের ‘‘দিন- দ্য ডে’ সিনেমাটি দেখেন। অনেক প্রশংসা করেছেন।
নির্মাতা বলেন, অনেকদিন পর ছবিটি দেখে ভালো লাগলো। লায়ন সিনেমা হলের মালিককে ধন্যবাদ- দর্শকদের এত সুন্দর প্রেক্ষাগৃহ উপহার দেওয়ার জন্য। লাভের কথা না ভেবে দর্শকদের জন্য সুন্দর একটি প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করেছেন তিনি।
শতকোটি টাকায় নির্মিত সিনেমাটি অহেতুক নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সিনেমাটিতে ১০০ কোটি টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কিছুই অযুক্তিক ব্যবহার হয়নি। এ ধরনের সিনেমা মুক্তি পেলে বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরবে। সিনেমা শিল্পের উন্নয়ন হবে। বসে দেখার মতো একটি সিনেমা হয়েছে। সিনেমাটি দেখতে আমি বিরক্তবোধ করিনি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন কারনে প্রেক্ষাগৃহে যেয়ে সিনেমা দেখেনি বলে মন্তব্য করেন নির্মাতা কাজী হায়াৎ। না যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জানা্ন।