ঘুষের বিপুল পরিমানের নগদ অর্থসহ আটক হয়েছিলে সার্ভেয়ার আতিক। ঘটনার সময়ে সার্ভেয়ারের বিপুল পরিমানের অর্থ বিমান বন্দর থেকে জব্ধ করা হলেও তাৎক্ষনিক আতিককে আটক করা সম্ভব হয়েছিলো না। তবে পরবর্তীতে তাকে আটক করেছিল স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা চুরি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ আটকের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে রিমান্ডে নিলে সেখানে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করেন তিনি। পরে গত ১৯ জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল মনসুর সিদ্দিকীর আদালতে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আদালত ও দুদক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ১ জুলাই সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিদর্শন গেট দিয়ে প্রবেশের সময় সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজকে জানায় কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
কিন্তু ততক্ষণে সার্ভেয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে আটকাতে পারেনি। পরে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা ঘুষসহ গ্রেফতার করা হয় আতিকুর রহমানকে। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অর্থের উৎস সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। একই দিন বিকেলে আতিকুর রহমানকে অন্য একটি বিমানে কক্সবাজারে ফিরিয়ে এনে জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানেও টাকার উৎস সম্পর্কে সুস্পষ্ট জবাব দিতে না পারায় গত ১ জুলাই রাতে জেলা প্রশাসন তাকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করে। পরদিন ২ জুলাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আতিকুরকে কক্সবাজার আদালতে পাঠানো হয়।
আদালতের বিচারক আতিকুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে গত ৪ জুলাই কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা সহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে হস্তান্তর, হস্তান্তরের চেষ্টা করেন। উৎস গোপন বা গোপন করার। একই সঙ্গে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে দুদক। আবেদনের শুনানি শেষে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, ৫ দিনের রিমান্ড কার্যকর করতে দুদকের দল আতিকুর রহমানকে ১৮ জুলাই সোমবার দুপুর ১টার দিকে জেলা কারাগার থেকে বের করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন, ১৯ জুলাই মঙ্গলবার আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকার ঘুষের উৎস জানার চেষ্টা করা হয়। তিনি নিজেই স্বীকার করেন যে, তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে টাকা গ্রহণ করেছেন। পরে জরিপকারী আতিকুর রহমান আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে মামলার আইও মো. এ বিষয়ে আদালতে আপিল করেন রিয়াজ উদ্দিন। বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আবেদনটি মঞ্জুর করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকীকে জবানবন্দি নেওয়ার নির্দেশ দেন। সার্ভেয়ার আতিকুরের বাড়ি সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর এলাকায়। তার পিতার নাম আব্দুর রহমান। তার কর্মস্থল বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হলেও তিনি গত দেড় বছর ধরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার অধীনে মহেশখালী উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। মহেশখালীতে সরকারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনসহ প্রায় ১৫টি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন আতিকুর রহমানসহ তিনজন সার্ভেয়ার।
উল্লেখ্য, বিপুল পরিমানের অবৈধ অর্থসহ কক্সবাজার এলএ শাখায় কর্তব্যরত সার্ভেয়ার আতিককে আটক করেছিলেন বিমান বন্দর থেকে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে দুদকের মাধ্যমে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তাকে তার এই উপার্যিত অর্থের উৎসের কারন জানতে চাইলে সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে না পারলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো। ১৯ জুলাই মঙ্গলবার তিনি তার অবৈধ সম্পদের উৎসের জবানবন্ধি দেন।