মা থেকেও নেই ছোট্ট শিশু রাইদার। প্রায় দেড় বছর আগেই অন্যত্র বিয়ে করেন শিশুটির মা। ফলে এখন তার একমাত্র ভরসা বাবা ও দুই গৃহশিক্ষিকা। বাবার পাশাপাশি সকলা-বিকাল তারাই রাইদার দেখাশোনা করেন। তবে এদিকে রাইদার মায়ের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বাবা সাদিকুর রহমান। আর সেই মামলার জের ধরে মায়ের বিচারের জন্য বাবার সাথে আদালতে এসেছে সে।
এ বিষয়ে রাইদার বাবা সাদিকুর রহমান বলেন, গত ৩০ মাস আগে আমার মেয়ে রাইদাকে ফেলে তার মা চলে গেছে। তাকে শেষ সম্বল ভেবে বুকে নিয়ে কোনভাবে বেঁচে আছি। মেয়ের চোখের দিকে তাকালে কষ্ট সহ্য করতে পারিনা৷ সে মায়ের জন্য প্রায় বিকেলে বিরক্ত করে। তখন তাকে বিভিন্ন গিফট দিয়ে বিষয়টি ভুলানোর চেষ্টা করি। কিন্তু মাঝে মাঝে সেটাও সম্ভব হয় না। বাড়িতে সকাল, বিকেল দুই গৃহশিক্ষিকা এসে তাকে দেখাশোনা করে। তাকে এখন একজন ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই৷’
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ সাদিকুর রহমানের সাথে জোছনেয়ারা খাতুনের বিয়ে হয়। তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। ২০১৫ সালের ১৫ জুন কন্যা সন্তান সুমেরা সাদিক রাইদা (৬) জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ের পর থেকে জোছনেয়ারা খেলায় খুশিমত জীবন যাপন করতো। এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে সমাধান হলেও সে সংসারের প্রতি উদাসীন থাকতেন, যখন তখন বাইরে অবস্থান করতেন। তবুও মেয়ের ভবিষ্যত ও সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে সাদিকুর সবকিছু সহ্য করে এসেছেন। তবুও এতে কোন লাভ হয়নি।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ডিভোর্স ছাড়া অন্যত্র বিয়ে এবং পূর্বের বিয়ে গোপন রাখার অভিযোগে মো. সাদিকুর রহমান (৪২) বাদী হয়ে জোছনেয়ারা খাতুন, মো.মরিয়ম বেগম, জাহাঙ্গীর আলম ও সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহন করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ পরিদর্শক এএইচএম মশিউর রহমান প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় জোছনেয়ারা খাতুন ও তার বর্তমান স্বামী সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে দোষী উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় অপর দুই আসামি মরিয়ম বেগম ও জাহাঙ্গীর আলমের অব্যাহতির সুপারিশ করেন।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৩ জুন জোছনেয়ারা তার স্বামী সাদিকুরকে তালাক দেন। পরবর্তী পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা এবং সন্তানের কথা চিন্তা করে আত্মীয়স্বজনের মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। উভয় পরস্পরের দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে পুনরায় সংসার করার সিধান্ত নেন। পরে জোছনেয়ারা তালাকনামা প্রত্যাহার করে নেন এবং ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি পুনরায় বিয়ে করেন। বিয়ের পর জোছনেয়ারা সংসার শুরু করলেও সে সাদিকুরের বাড়িতে না থেকে বাবার বাসা বা অন্যত্র থাকতো। এরমধ্যে সাদিকুরের ছোট ভাই সাজ্জাদুর রহমান বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসে। জোছনেয়ারার সাথে সে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর ২০২০ সালের ২৫ মে জোছনেয়ারা কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে চলে যায়। বাসা থেকে যাওয়ার পর সাদিকুরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বাবার বাসায় না গিয়ে জোছনেয়ারা গোপনে তার স্বামী সাদিকুরের ছোট সাজ্জাদুরের সাথে গিয়ে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে থাকে। তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, সাদিকুরকে বিয়ের পূর্বে আজিজুল হক নামে একজনকে জোছনেয়ারা বিয়ে করে। কিন্তু জোছনেয়ারা বিষয়টি গোপন রাখেন। অথচ একজন স্বামী থাকা অবস্থায় তালাক না দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে অপরাধ করেছেন। এছাড়া জোছনেয়ারা বিবাহিত জেনেও সাজ্জাদুর তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার অপরাধ করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মনিবুল হক মনি বলেন, গত দেড় বছর ধরে রাইদার মা তার চাচা সাজ্জাদুরকে বিয়ে করেছে। কিন্তু সে রাইদার কোন খোজ খবর নেয় না। এতে রাইদা মানসিকভাবে ভাল নেই। সে এখন তার মায়ের বিচার চাইতে আদালতে এসেছে।’
তিনি আরো বলেন, রাইদার বাবাকে তার মা ডিভোর্স না দিয়ে বিয়ে করেছে। এজন্য আদালতে চারজনের মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় সত্যতা পাওয়ায় পিবিআই দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কিন্তু অপর দুইজনের তদন্ত প্রতিবেদনে নাম না আসায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির জন্য আবেদন করেছি। এ বিষয়ে শিগগিরই আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’
এদিকে মায়ের কথা এখনো ভুলতে পারছে না ছোট্ট শিশু রাইদা (৬)। সে এখনো বিশ্বাস করে, মা একদিন তার কাছে ফিরে আসবে। তবে দেখতে দেখতে দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মায়ের দেখা পায়নি সে। মা কোথায় আছে-কেমন আছে- খুব জানতে ইচ্ছা করে তার।