অন্ধ হয়েও পারভীন আশিকুরের হাত ধরেছিল। এরপর তিনি 21 বছর অতিবাহিত করেন। কোন অনুশোচনা বা অসন্তুষ্টি নেই. বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করার পরও দৃষ্টিশক্তি না থাকায় চাকরি পায়নি আশিকু। স্বামী-স্ত্রী খেলনার দোকান চালান। ভালো করে বাঁশি বাজাও আশিক। তাদের দিন কাটে সুখে।
মাদারীপুর শকুনি লেকসাইডে খেলনা বিক্রি করছেন আশিকুর ও পারভীন দম্পতি। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করেছেন। পৃথিবীতে মাত্র দুজন। দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও ভালোবাসার কমতি নেই।
পারভীন বেগম (৩৮) রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জের আব্দুল জব্বারের মেয়ে বলে জানা গেছে। ঢাকায় মামার সঙ্গে থাকতেন। সে সময় ঢাকায় আসেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর গ্রামের ফজলুর রহমান সরদারের ছেলে সরদার আশিকুর রহমান (৪৪)। কোনোভাবে দুজনের দেখা হলো। তারা একে অপরকে পছন্দ করত। পারভীন অন্ধের প্রেমে পড়েন অন্ধ আশিকুর রহমান। এরপর বাবা-মায়ের বিপরীতে মামার সহায়তায় আশিকুরকে বিয়ে করেন।
২০০৩ সালে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে মাদারীপুর চলে যান পারভীন। এরপর দুজনে শহরের মোড়ে বাসা ভাড়া নেন। আঁখিকে (১৮) বিয়ে করেন মেয়ে আফিয়া আক্তার।
সরদার আশিকুর রহমানের ডাক নাম হেমায়েত। আন্ডারচর পলিটেকনিক হাই স্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেন। কবিতা লেখে, ভালো বাঁশি বাজায়।
সরদার আশিকুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ২৪ বছর আগে কালকিনির একটি মামলায় আমাকে সাক্ষী করা হয়। কিন্তু আমি তা জানতাম না। তাই আদালতে সাক্ষ্য দেইনি। কয়েকদিন পর ঢাকা থেকে লঞ্চে করে গ্রামে এলে প্রতিপক্ষ আমার চোখ সরিয়ে নেয়। এরপর ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা করি। এরপর ঢাকায় পারভীনের সঙ্গে দেখা হয়। পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রেম ও বিয়ে করি। পারভীন অন্ধ হয়েও ভালোবেসে আমাকে বিয়ে করেছে। আমি এখনো পারভীনকে ভালোবাসি।’
আশিকুর আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, ‘আমি জীবন যুদ্ধে হারার মানুষ নই। স্ত্রীকে নিয়ে শুরু হলো নতুন জীবনযুদ্ধ। আমি আমার স্ত্রী পারভীনকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের ধারে খেলনা ও বাঁশি বিক্রি করি। আমার খুব ভালো লাগে যখন মানুষ লেকে বাঁশির সুর শুনতে আসে। হ্রদ পরিদর্শন করা ছোট শিশুরা আমার খেলনা কিনেছে। খেলনা বিক্রির টাকায় আমাদের দুজনের সংসার চলে। তা ছাড়া পারভীন আমার দেখাশোনা করে। আমাকে যথেষ্ট প্রশংসা করে, আমাকে ভালবাসে, আমরা আমাদের বাকি জীবন এভাবেই থাকতে চাই।’
পারভীন বেগমের জীবন নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, আমি তাকে অন্ধ জেনে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমৃত্যু তার পাশে থাকতে চাই। আমার পরিবার এই বিয়ে অনুমোদন করে না কিন্তু আমি ভালো আছি। আমি তাকে নিয়ে খুশি। এমন একজন মানুষের সাথে থাকতে পেরে আমি সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করি। খেলনা ও বাঁশি বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে ভালোই জীবনযাপন করি।’
লেকসাইডে খেলনা কিনতে আসা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নাতির জন্য খেলনা কিনতে এসেছি। আমি খেলনা কিনলে এখান থেকে কিনি। আসলে স্বামী-স্ত্রীর এমন কাজ দেখতে ভালো লাগে।